করোনা মোকাবিলায় সবার সহায়তা লাগবে: অমর্ত্য সেন

অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেন।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পুরো পৃথিবী এখন লড়াই করছে, কিন্তু এই লড়াইকে যেভাবে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বড় ধরনের দুর্যোগ, সন্দেহ নেই। সবার সহযোগিতা নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে এবং সহযোগিতার পরিবেশ তৈরির জন্য গণতন্ত্র লাগবে। গণতন্ত্র সবার সহযোগিতার মধ্য দিয়েই সফল হয়।

 অমর্ত্য সেন আরও বলেন, অস্ত্রের যুদ্ধে তো একক নেতৃত্ব থাকে, তিনি নেপোলিয়ন হতে পারেন বা স্তালিন। অর্থাৎ যুদ্ধে এমন একজন থাকেন, যিনি সিদ্ধান্ত নেন, কখন কী করতে হবে। কিন্তু এটা তো আর সে ব্যাপার নয়। সে জন্য করোনাবিরোধী এই লড়াইকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা দেওয়া ভালো কাজ নয়। কারণ, একটি দেশে তো বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী থাকে। কারও লক্ষ্য থাকে মূলত এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো। কারও লক্ষ্য থাকে খাবারের সংস্থান নিশ্চিত করা। আর কোনো দেশে লকডাউন করা হলে অনেক মানুষ চাকরি হারায়। মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। অনেক মানুষ ক্ষুধায় প্রাণ হারাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কে যেতে হবে। কিন্তু যুদ্ধে তো আর সহযোগিতার বালাই থাকে না।

ভারতের টেলিভিশন মাধ্যম এনডিটিভির এক অনুষ্ঠানে গত শুক্রবার তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রশ্ন ছিল এ থেকে কী শিক্ষা নেওয়ার আছে। জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি অবশ্য অর্থনীতি নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। অর্থনীতি আক্রান্ত হচ্ছে বা হবে, তা তো ঠিকই, আবার এটাও ঠিক, ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। সমস্যা হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অবহেলা। আবার এই সমস্যা বর্তমান সরকারের আমলে সৃষ্ট নয়, আগে থেকেই আছে। আমি মনে করি, আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে; বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায়। ব্যাপারটা এ রকম নয় যে আপনি সরকারি হাসপাতালে যাবেন আর সরকার আপনার খরচ দিয়ে দেবে। আমাদের দরকার হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো।Ñএই অবকাঠামো চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশে আছে। আরও অনেক দেশেই এটা আছে, এতে সেখানে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। কিন্তু ভারতে এই স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অবহেলাটা চিরকালীন ব্যাপার।’

অমর্ত্য সেন বলেন, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ভারতে শিক্ষার প্রতি অবহেলাও আছে। এই অবহেলার নমুনা হচ্ছে, শিক্ষা এখন বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়েছে।

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অতিমাত্রায় বঞ্চিত হওয়া নিয়ে অমর্ত্য সেনের চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে, খাদ্যবঞ্চনা ও দুর্ভিক্ষের বিশ্লেষণ। দুর্ভিক্ষের বিশ্লেষণ করে অমর্ত্য সেন যে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তা হলো: ক. ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্ভিক্ষ হওয়ার মতো খাদ্যস্বল্পতা সাধারণত হয় না, যদিও ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক দেশেও দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্যস্বল্পতা হতে পারে। খ. দুর্ভিক্ষ যে কেবল খাদ্য সরবরাহে ঘাটতির কারণে হয় তা নয়, বরং গরিবের ‘খাদ্য প্রাপ্তির অধিকারহীনতা’র কারণেও ঘটে। এ ছাড়া দুর্ভিক্ষ রোধে গণ-আলোচনা, গণমাধ্যমের প্রচার—এসবের গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন তিনি। সে জন্য গণতন্ত্র তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।