যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হতে পারত: বরিস জনসন

বরিস জনসন
বরিস জনসন

তিন দিন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকার পর গতকাল রোববার হাসপাতাল ছেড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত ২৭ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বরিস জনসন বাসায় থেকে কাজ করছিলেন। ১০ দিনের মাথায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভর্তি হন সেন্ট্রাল লন্ডনের সেইন্ট থমাস হসপিটালে। করোনার লক্ষণগুলো প্রকট হওয়ায় ৯ এপ্রিল জনসনকে নিবিড় পরিচর্যায় নেওয়া হয়। হাসপাতাল ছাড়ার পর গতকাল রোববার বরিস জনসন টুইটারে এক ভিডিওতে তাঁর পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানান।

বরিস জনসন অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের। ভিডিও বার্তার পূর্ণাঙ্গ পড়ুন এখানে—

আজ এক সপ্তাহ পর আমি হাসপাতাল ছাড়লাম। কোনো সন্দেহ নেই, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) আমার জীবন বাঁচিয়েছে। এই ঋণের কথা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তবে তার আগে ধন্যবাদ জানাতে চাই যুক্তরাজ্যের সবাইকে। এই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনারা যে পরিশ্রম এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং করে যাচ্ছেন, তার জন্য।

সূর্যটা যখন আলো দিচ্ছে, শিশুরা যখন ঘরে বসে আছে; তখন বাইরের প্রাকৃতিক জগৎটা সবচেয়ে সুন্দর রূপে আবির্ভূত। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ফলে আমি দিব্যি কল্পনা করতে পারছি, এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মকানুন মেনে চলা কতটা কঠিন। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ, এই দেশের লাখো মানুষ সঠিক কাজটিই করছেন। লাখো মানুষ নিজেদের অন্তরীণ রাখার মতো কষ্ট স্বীকার করছেন। এই কাজ আপনারা করছেন বিশ্বাস ও ধৈর্যের সঙ্গে। এই কাজ করছেন অন্যের এবং নিজের মঙ্গলের কথা ভেবে।

এই ইস্টার সানডেতে জানিয়ে রাখি, আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত মূল্যবান। এবং এর মূল্য প্রতিনিয়ত প্রমাণিত। আমরা রোজ শোকাহত হচ্ছি। কারণ, প্রতিদিনই আমাদের মধ্য থেকে বিপুল মানুষ করোনাভাইরাসে প্রাণ হারাচ্ছে। যদিও লড়াই কোনোভাবেই শেষ হয়নি। আমরা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই অবিশ্বাস্য জাতীয় যুদ্ধে উন্নতি করছি। এটি এমন এক যুদ্ধ, যেখানে শত্রুকে এর আগে আমরা দেখিনি। এই শত্রুকে আমরা পুরোপুরি বুঝেও উঠতে পারিনি। আমরা এই জাতীয় যুদ্ধে উন্নতি করছি কারণ, ব্রিটিশ নাগরিকেরা সবাই মিলে গোটা দেশের জন্য এক মানবঢাল হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এটা হয়েছে আমাদের সবচেয়ে সেরা জাতীয় সম্পদ, আমাদের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে ঘিরে।

আমরা এটা উপলব্ধি করেছি তখনই, যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সবাই মিলে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে নিরাপদ রাখলে আমরা নিরাপদে থাকব, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে চাপে না ফেললে আমরাও বেঁচে যাব। এই দেশ আবার প্রাণ ফিরে পাবে এবং এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হবে, অতীতেও যেভাবে আমরা একাধিক চ্যালেঞ্জে জয়লাভ করেছিলাম।

গত সাত দিন আমি দেখেছি, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস কতটা চাপে আছে। আমি দেখেছি মানুষের সাহস, কেবল চিকিৎসক এবং নার্সদের নয়, প্রত্যেকের মধ্যে আমি সাহস দেখেছি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রাঁধুনি, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ফিজিও, রেডিওগ্রাফার, কম্পাউন্ডার—সবার মধ্যেই সাহস দেখেছি। তাঁরা প্রত্যেকে কাজে আসছেন। তাঁরা নিজেদের ভীষণ ঝুঁকিতে সমর্পণ করছেন, মুখোমুখি হচ্ছেন ভয়ানক এক ভাইরাসের।

এই সাহস, আত্মত্যাগ, দায়িত্ব এবং এই ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস অপরাজেয়। ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই নারী–পুরুষ মিলিয়ে দারুণ সব মেধাবী চিকিৎসক এবং এই অঙ্গনের নেতাদের। বিশেষ কিছু কারণে তাঁদের মধ্যে কজনের নাম বলতেই হয়। নিকের কথাই বলি। কদিন আগে তিনি কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে কারণে আমি তাঁর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

ধন্যবাদ জানাতে চাই অনেক নার্সকে, নারী ও পুরুষ মিলিয়ে, যাঁদের সেবায় আমি অভিভূত। আমি হয়তো কারও কারও নাম বলতে ভুলে যাব, তাই ক্ষমা করে দেবেন। তবে ধন্যবাদ দেব পো লিং, শ্যানন এবং এমিলিকে। ধন্যবাদ অ্যাঞ্জেল, কোনি, বেকি, র‌্যাচেল, নিকি ও অ্যানকে। এবং আমি আশা করি, তাঁরা কিছু মনে করবেন না, দুজন নার্সের কথা এখানে বলতেই হবে। যে দুজন ৪৮ ঘণ্টা আমার শিয়রের পাশে ছিলেন, যখন আমার অবস্থা ছিল ভীষণ সংকটময়। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারত। ওই দুজনের একজন হলেন জেনি, নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের ইনভারকারগিল শহরের মানুষ। আরেকজন হলেন লুইস, যাঁর বাড়ি পর্তুগালের পোর্তো শহরে।

সেই রাতের প্রতিটি সেকেন্ড তাঁরা আমার ওপর নজর রেখেছিলেন, যখন যা দরকার ছিল, তাঁরা তা–ই করেছেন। এবং এ কারণেই শেষতক আমার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন নিতে শুরু করেছিল।

এ কারণেই আমরা করোনাভাইরাস নির্মূল করতে পারব এবং তা করব সবাই মিলে। আমরা জয়লাভ করব, কারণ, আমাদের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এই দেশের হৃৎস্পন্দন। এই দেশের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস সেরা। এটি অজেয়। এটি ভালোবাসায় চালিত।

সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ, আমাদের সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে। চলুন, সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো মেনে চলার বিষয়টি আবারও স্মরণ করি। ঘরে থাকুন, আমাদের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে রক্ষা করুন এবং জীবন বাঁচান।

আপনাদের ধন্যবাদ এবং শুভ ইস্টার। তথ্যসূত্র: বিবিসি

*ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মাহফুজ রহমান