মোদির সাত দফা, সমালোচনায় কংগ্রেস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে সাতটি পরামর্শ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাত দফার অন্যতম কারও চাকরিচ্যুত না করা।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আপনার অধীনে, আপনার শিল্পে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের প্রতি সদয় হোন। কারও চাকরি যেন না যায়। কারও জীবিকা কেড়ে নেবেন না। সেই সঙ্গে বলেছেন, গরিব মানুষদের প্রতি দয়া দেখান। তাঁদের সাধ্যমতো খাবার দিন।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কর্মীদের হেনস্তা হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সপ্তম পরামর্শ, ‘ডাক্তার, নার্স, সাফাই কর্মী, পুলিশদের প্রতি সদয় থাকবেন। এঁরাই এই কঠিন সময়ের যোদ্ধা। তাঁদের সম্মান করুন।’

এই দুইয়ের বাইরে বাকি পাঁচ উপদেশ বা পরামর্শ করোনার জন্ম ইস্তক শোনা। যেমন, বাড়ির বয়স্কদের ঠিকমতো দেখাশোনা করা, মাস্ক পরা, ঘর থেকে অপ্রয়োজনে না বেরোনো, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনে চলা। ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের ‘আয়ুষ’ মন্ত্রণালয় যা যা করতে বলেছে, সেগুলো মেনে চলার কথাও তিনি বলেছেন। যেমন মাঝে মাঝেই গরম পানি খাওয়া। আর সবাইকে ‘আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপ’ ডাউনলোড করতে বলেছেন যাতে করোনার মোকাবিলা ঠিকভাবে করা যায়।

প্রধানমন্ত্রীর আজকের ভাষণের নির্যাস, লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ছে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশেই কঠোরভাবে লকডাউন বলবৎ করা হবে। ছাড় দেওয়া হবে খুব কম। যে সব এলাকা তুলনামূলকভাবে কম আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হবে, ২০ এপ্রিলের পর সেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজকর্ম শুরু করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এই এক সপ্তাহে সেই মূল্যায়ন করা হবে। যেসব এলাকা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হবে সেই সব এলাকাতেই। তিনি জানান, কাল বুধবার এই বিষয়ে সরকারি নির্দেশাবলি প্রচার করা হবে।

এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট, সরকার অর্থনীতির স্বার্থে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করার পথে এগোচ্ছে। এর ইঙ্গিত গত শনিবারই মোদি দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, প্রাণের সঙ্গে জীবিকাকেও বাঁচাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়। দলের নেতা পি চিদাম্বরম, কপিল সিব্বাল ও অভিষেক মনু সিংভিরা সরকারের ‘দিশাহীন সিদ্ধান্তের’ কঠোর সমালোচনা করেন। অভিষেক বলেন, ‘এ যেন ডেনমার্কের রাজপুত্র ছাড়া হ্যামলেট! নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলো।’

কংগ্রেসের অভিযোগ, দরিদ্র, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্ত মানুষদের বাঁচাতে আরও ত্রাণের ব্যবস্থা না করে সরকার মানুষের শুভ বুদ্ধির ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। চিদাম্বরমের টুইট, আরও টাকা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি কানে তোলা হলো না। রঘুরাম রাজন, জাঁ ড্রেজ, প্রভাত পট্টনায়ক, অভিজিৎ ব্যানার্জিদের মতো দিকপাল অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ বৃথা গেল। ২১ দিনের পর গরিবদের আরও ১৯ দিন স্রেফ ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলো। অথচ টাকার অভাব নেই। চিদাম্বরম লিখেছেন, ‘কাঁদো দেশবাসী কাঁদো।’