করোনাকালে একটু ভালো খবরের জন্য হাহাকার

মানুষ তাঁদের মানসিক শক্তি, সাহসকে জাগিয়ে রাখতে ইতিবাচক খবরের দিকে ঝুঁকছেন। ছবি: রয়টার্স
মানুষ তাঁদের মানসিক শক্তি, সাহসকে জাগিয়ে রাখতে ইতিবাচক খবরের দিকে ঝুঁকছেন। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘ভালো খবর’ জানতে মানুষের হাহাকার বাড়ছে। চারপাশের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার খবরের স্তূপের মধ্যে একটু দম নেওয়ার জন্য অনলাইনে ব্যাপক হারে বাড়ছে ‘ভালো খবর’ পড়ার চাহিদা।

গতকাল মঙ্গলবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে ভয়াবহ শিরোনাম, ভীতিকর পরিসংখ্যান এবং গভীর অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ তাঁদের মানসিক শক্তি, সাহসকে জাগিয়ে রাখতে ইতিবাচক খবরের দিকে ঝুঁকছেন। আশাবাদী খবরের জন্য বিশেষায়িত সাইটগুলো অনুসন্ধানের হার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় বেড়েছে। গুগলে ‘গুড নিউজ’-এর অনুসন্ধান বছরের শুরুর তুলনায় এখন পাঁচ গুণ বেড়েছে।

ইতিবাচক খবরের সাইট গুড নিউজ নেটওয়ার্ক নব্বই দশকে তৈরি করা হয়েছিল। এই নেটওয়ার্কে ইতিবাচক খবরের সন্ধানে গত মাসে খবরগুলো অনুসন্ধানের হার তিন গুণ বেড়েছে। এক কোটিরও বেশি মানুষ গত মাসে নেটওয়ার্কটি অনলাইনে পরিদর্শন করেছে।

নেটওয়ার্কের মুখপাত্র উয়েস-কোরব্লে বলেছেন, ‘মানুষ তাঁর আশপাশের, নিজ শহরের, নিজ দেশের অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা, ইতিবাচক লিংকগুলো আমাদের পাঠাচ্ছে। তাই আমাদের কাছে এখন অনেক বেশি সংখ্যক ভালো খবর রয়েছে।’ কোরব্লে এক দশক আগে ৯/১১ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়েও ইতিবাচক খবরের প্রতি মানুষের আগ্রহের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, মানুষ এখন ভালো খবর পড়ার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে এবং এটা থেকে যাবে।’

অন্যান্য ওয়েবসাইট, যেমন: দ্য গার্ডিয়ান, ফক্স নিউজ, হাফিংটন পোস্ট, এমএসএন এবং ইয়াহু! প্রেরণাদায়ক খবরের জন্য তাদের আলাদা পেজ রেখেছে।

নেটওয়ার্কের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সিএনএন গত বছর দ্য গুড স্টাফ শিরোনামে একটি নিউজলেটার তৈরি করে। গত মাসে ওই নিউজলেটারটির অনলাইন গ্রাহকসংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

অভিনেতা জন ক্রাসিনস্কি ২৯ মার্চ থেকে তাঁর সাপ্তাহিক ইউটিউব ভিডিও শো ‘সাম গুড নিউজ’ নিয়ে হাজির হয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রচলিত সংবাদ প্রচারের ধরনকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এতে উৎসাহব্যঞ্জক খবরের ওপর আলোকপাত করা হয়। ক্রাসিনস্কির অনুষ্ঠান মহামারির ‘স্বাস্থ্যবীর’দের নিবেদন করা হয় এবং এতে তারকা উপস্থিতিও থাকে। অনুষ্ঠানে তাঁর অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্টও হাজির হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বটি দেখা হয়েছে দেড় কোটিবার।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সামাজিক গবেষণাবিষয়ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট সরোকা বলেছেন, ‘দুঃসময়ে আমাদের প্রত্যাশার বাইরের অনেক খবরও খোঁজে মানুষ। ইতিবাচক খবরের দিকে মানুষের ঝুঁকে পড়ার জন্যও এটা ঘটে থাকতে পারে।’

ইউনিভার্সিটি অব কানসাসের সেন্টার ফর মিডিয়া এনগেজমেন্টের অধ্যাপক অ্যাশলে মুড্ডিমান বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক খবর মানুষকে সহায়তা করে। তিনি বলেন, ‘অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ অনেক বেশি ভীত থাকে অথবা চারপাশ খুব বেশি নেতিবাচক হয়ে পড়ে, তখন মানুষ কিছু করার চেষ্টা করে। আমি মনে করি, মানুষ সমাধান চায় এবং একে অন্যের সঙ্গে বিবাদের চেয়ে দেখতে চায় সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু মানুষ কাজ করছে। এ ধরনের বিষয় যদি খবর তুলে আনতে পারে, আমি মনে করি পাঠক, দর্শকের কাছে তা আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’

কিছু মানুষ স্বাস্থ্য সংকটের হতাশাজনক খবরের ভিড়ে ক্লান্তি বোধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির এক বাসিন্দা ক্ল্যারেন্স অ্যাডওয়ার্ডস বলেন, ‘একের পর এক নেতিবাচক খবরের শিকার হতে পারে আমাদের অনেকে। আমার মনে হয়, গণমাধ্যমের নজর দেওয়া উচিত কোন খবর পরিবেশন করতে হবে তার দিকে। বিশেষ করে ভীতিকর ও খারাপ খবরের ক্ষেত্রে।’