হাসপাতালের জন্য হেঁটে হেঁটে ৪০ লাখ পাউন্ড তুলেছেন ৯৯ বছরের প্রবীণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত ও বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) দায়িত্বরত ছিলেন ক্যাপ্টেন টম। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত ও বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) দায়িত্বরত ছিলেন ক্যাপ্টেন টম। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা টম মুরের অন্যতম পরিচয় হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। জীবনের ৯৯টা বছর পার হয়ে গেলেও এখনো মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন টম। সেই তাগিদ থেকে নিজের দেশের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (এনএইচএস) সাহায্য করতে এই বয়সে হেঁটে হেঁটে তহবিল সংগ্রহের কথা ভাবেন তিনি। কেবল ভাবা নয়, সেইমতো কাজ শুরু। এ পর্যন্ত টম মুরের সংগ্রহ ৪০ লাখ পাউন্ড। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের গ্রাম মার্সটন মোরেটেইনে থাকেন টম। ৬ এপ্রিল তাঁর বাসার পেছনের বাগানে হাঁটার পরিকল্পনা নেন তিনি। শুনলে মনে হতে পারে এ আর এমন কী! তবে ৮২ ফুটের অতটুকু জায়গায় প্রতিদিন হাঁটা মোটেও সহজ নয় ৯৯ বছরের এক বৃদ্ধের জন্য। কারণ, হাঁটার জন্য একধরনের ওয়াকারের সাহায্য নিতে হয় তাঁকে। তবু অদম্য টম।

আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ১০০ বার প্রদক্ষিণ করবেন ৮২ ফুটের ওই জায়গা। তবে এখানেই থামবেন না। আরও ১০০ বার প্রদক্ষিণ করতে চান তিনি। ৩০ এপ্রিল নিজের ১০০তম জন্মদিনের আগেই এই ১০০ বার পূরণ করতে চান তিনি।

ছোট মেয়ে হাননাহের উৎসাহে তহবিল গঠনের বিষয়টি মাথায় আসে টমের। সেই সঙ্গে আছে এনএইচএসের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ। কারণ, স্কিন ক্যানসারসহ নানা ধরনের অসুখে চমৎকার চিকিৎসা পান তিনি। আর সেটা এনএইচএসের কাছ থেকে। হাননাহ তাঁর নামে ইনস্টাগ্রামে ফান্ড রাইজিং পেজ খুলে জাস্ট গিভিং অ্যাকাউন্ট করেন। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এক হাজার পাউন্ড তোলার। তবে এক সপ্তাহে অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায় ৪০ লাখ পাউন্ড। টম মুর যা আশা করেছিলেন, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ তুলতে পেরেছেন। প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর বিপুলসংখ্যক মানুষের এই ভালোবাসায় বাবা ও মেয়ে আবেগে উদ্বেলিত।

তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে এই তহবিলে ১০ লাখ পাউন্ড জমা পড়ার পর টম নিজেই বলেছিলেন, ‘এ তো অবিশ্বাস্য।’

৯৯ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন টম এখন এভাবেই হাঁটেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
৯৯ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন টম এখন এভাবেই হাঁটেন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ক্যাপ্টেন টমের এই অর্থ যে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে জমা পড়বে, তার প্রধান এলি অরটন বলেন, ‘আমাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি রোল মডেল।’ টম ও অন্যদের তোলা অর্থ দাতব্য সংস্থাটি হাসপাতালের কর্মীদের স্বচ্ছন্দে কাজ করার জন্য। পাশাপাশি হাসপাতালফেরত রোগীদের দেখভালের জন্য কমিউনিটি গ্রুপগুলোকে সাহায্য করবে।

করোনাভইরাসে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দিতে কয়েক মাস ধরে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইচএস। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবও থামাতে পারেনি সেবকদের। এখানকার অনেক কর্মী ময়লা ফেলার ব্যাগ মাথায় দিয়েও সেবাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

টম মুর যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট ওয়ার্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ওই সময় তিনি ভারত ও বর্মায় দায়িত্ব পালন করেন এবং ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।