করোনা ঠেকছে অস্ট্রেলিয়ায়

জনমানবহীন সিডনির একটি বিপণীবিতান। অস্ট্রেলিয়া, ১৬ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
জনমানবহীন সিডনির একটি বিপণীবিতান। অস্ট্রেলিয়া, ১৬ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাস যেভাবে বেড়েছিল, সেভাবে-ই কমছে। সংক্রমণের মাত্রারেখা নিচে নামছে একদম মাথা নিচু করে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে সংক্রমণের সংখ্যা ২১-এ এসে ঠেকেছে। কয়েক দিন ধরে নতুন করে রোজ শনাক্তের সংখ্যা ৫০ জনেরও কম। তাই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের মুখে হাসি না ফুটলেও আত্মবিশ্বাস ফুটেছে।

প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ‘করোনাভাইরাস দমন করতে অস্ট্রেলিয়া তুলনামূলকভাবে ভালো করছে। শনাক্তকরণে রয়েছে বিশ্ব নেতৃত্বে।’

দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯৮ শতাংশের বেশি নেগেটিভ। এ কারণে এ কয়েক দিনেই অস্ট্রেলিয়ার চিত্র পাল্টে গেছে। সারা বিশ্বে যখন গরম বাড়ে, তখন অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ে শীত। কিন্তু এই শীত যেন হাওয়ায় মিশে গেছে। করোনার প্রভাব কমায়, হঠাৎই যেন বসন্তের দোলা লেগেছে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে। দিগন্ত চরিয়ে বেড়ানো মানুষগুলো দিনের পর দিন ঘরবন্দী থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে এখন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র সেই মুক্তি এখনই দিচ্ছে না। হিসাব কষছে তার সক্ষমতার।

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে জনশূন্য সিডনির সড়ক। অস্ট্রেলিয়া, ১৬ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে জনশূন্য সিডনির সড়ক। অস্ট্রেলিয়া, ১৬ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মারফি বলেন, ‘যদি আমরা সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থাগুলো এখনই শিথিল করি, যা এখন কমিউনিটি সংক্রমণ বন্ধ বা হ্রাস করছে। তবে তা বেড়ে আরও বড় আকারে প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।’

ব্রেন্ডন মারফি বলেন, ‘আমরা শিথিলকরণে তখনই যেতে পারব, যখন আমাদের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা সুন্দরভাবে কার্যোপযোগী থাকবে। কোনো প্রাদুর্ভাবের আভাস পেলেই তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারব।’ ফলে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি চলবে কমপক্ষে আরও ৪ সপ্তাহ।

এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৬৪ জন। এর মধ্যে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন শনাক্তের অর্ধেকেরও বেশি, ৩ হাজার ৭৩৭ জন। আর বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থানরত ৫০ থেকে ৬০ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়নি।

কিন্তু এত ইতিবাচক খবরের মধ্যেও বিতর্ক ছাড়ছে না রুবি প্রিন্সেস নামের প্রমোদতরিটির। ওই এক প্রমোদতরি থেকে দেশটিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৬০০ জনের মতো এবং এই মহামারিতে অস্ট্রেলিয়াতে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের ১৮ জনই ওই প্রমোদতরির যাত্রী। এখন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কীভাবে পরীক্ষা ছাড়া যাত্রীরা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ল, তা তদন্ত করছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ। কারও দোষ পেলে শাস্তি হবে নির্ঘাত।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় শীত শুরু হয়ে গেছে। জেঁকে বসবে কয়েক দিনের মধ্যেই। সরকার চিন্তিত সামনের এই শীতকে নিয়ে। কারণ, প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ায় এই শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয় হাজার হাজার মানুষ। মৃত্যুবরণ করে হাজারখানেক। তাই এই ফ্লু এবং করোনাভাইরাস যেন একসঙ্গে না লেগে যায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখছে সরকার। ফলে, এবার দ্রুত সবাইকে ফ্লুর টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া সরকারের সকল দৃষ্টি এখন মহামারি থেকে আগে পরিত্রাণ পাওয়া।

সবকিছু মিলে এখন অস্ট্রেলিয়া তাদের চিকিৎসা কর্মকর্তাদের বেঁধে দেওয়া পথনির্দেশনা মেনেই চলছে। ব্রেন্ডন মারফি যেমন এই সপ্তাহের প্রথম দিকে বলেছিলেন, ‘আমরা জানি না এই ভাইরাসের প্রতিষেধক কখন আসবে। ল্যাবগুলোতে দিনরাত কাজ করা দেখে মনে হচ্ছিল অলৌকিকভাবে তাড়াতাড়ি কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন সে রকমটি মনে হচ্ছে না। ফলে, আপাতত বিকল্প হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভাইরাসটিকে নির্মূল করার চেষ্টা এবং তারপর এর সঙ্গে বাঁচতে শেখা যতটুকু সম্ভব।’