ইতালিতে সন্ধ্যেবেলা বাজে তাঁর বেহালার সুর

বেহালা বাজাচ্ছেন অ্যালদো সিবাস্তি। ইতালির মিলান শহরে।  ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
বেহালা বাজাচ্ছেন অ্যালদো সিবাস্তি। ইতালির মিলান শহরে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

করোনার বিস্তার ঠেকাতে ইতালিতে চলছে লকডাউন। লোকজন গৃহবন্দী। এ সময় পেশাদার শিল্পীরাও ঘরে বসে আছেন। তাঁদের একজনের নাম অ্যালদো সিবাস্তি এন সিচ্চিনি। তিনি পেশাদার বেহালাবাদক। মিলান শহরে থিয়েটারে বেহালা বাজিয়ে হাজারো মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করতেন। এখন প্রতি সন্ধ্যায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বেহালা বাজান। প্রতিবেশীদের আনন্দ দেন। তাঁদের মনের অসুখ সারান।

ফেব্রুয়ারির শেষ দিকের কথা। অ্যালদো সিবাস্তি দেশটির ঐতিহাসিক ওপেরা হাউসের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। সে সময় করোনা রোগী শনাক্ত হয়, আর সবকিছু থমকে যায়। এই করোনাকালের বর্ণনা দিতে গিয়ে অ্যালদো বলেন, ‘সবই থমকে যায়। সবার জীবনে ছন্দপতন ঘটে। অপেরা, সিনেমা, থিয়েটার...সব বন্ধ হয়ে যায়। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। জানি না আবার আগের মতো সচল হবে কি না এই বিনোদনকেন্দ্রগুলো। এখন তো এমন দুঃসময়, হাজারখানেক দর্শকে ভরা কোনো থিয়েটারের কথা কল্পনাই করা যায় না! একসময় লকডাউন উঠে যাবে। হয়তো এরপরও কয়েক মাস কেটে যাবে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে। এমনও হতে পারে, আগে যেমন ছিল আমাদের জীবন, তেমনটি আর থাকবে না।’

কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। সংকটের দিনেও বয়েই চলে। শিল্পীরাও বসে থাকতে পারেন না। অ্যালদো বলেন, ‘মার্চে আমার এক সহকর্মী একটা আহ্বান জানান। ইতালিতে যত শিল্পী আছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই যেন প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিজ নিজ বেলকনিতে এসে দাঁড়ান। অথবা ঘরের জানালা খুলে দেন। ঠিক ছয়টায় শুরু করেন তাঁদের পরিবেশনা।’

অ্যালদো বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার জড়তা ছিল। খটকা লাগত। কারণ, আমার প্রতিবেশীদের অনেকেই জানেন না আমি একজন পেশাদার বেহালাবাদক। দ্বিধা নিয়েই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বেহালায় সুর তুলি। মিনিট দুই পর টের পাই, আশপাশের বেলকনিগুলোতে মানুষের উপস্থিতি। তাঁদের মুখে হাসি। তাঁরা বেশ খুশি। একটু বিরতি দিই। আর তখনই করতালি দেওয়া হয়। শোনা যায় হর্ষধ্বনি। আরও বাজানোর বায়না আসে। আরও কিছুক্ষণ বাজাই। টের পাই, প্রতিবেশীরা মুগ্ধ। এরপর থামি, তাঁদের উদ্দেশে বলি, কাল আবার ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায় দেখা হবে।’

এরপর থেকে প্রতি সন্ধ্যায় চলে বেলকনির এই সুরের আসর। অ্যালদো তাঁর চারপাশের মানুষগুলোকে সুরের জালে বন্দী করেন। তিনি বলেন, ‘জানি, আমার এই বেহালার সুরে কারও শরীরের অসুখ সারবে না, তবে আমাদের মনের রোগ তো সেরে যায়। সময় কেটে যায় আনন্দময়তায়।’

ইউএন নিউজ