দক্ষিণ সুদানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ৫ জন, ভেন্টিলেটর ৪

দক্ষিণ সুদানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে জনসাধারণকে দেওয়া হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ সুদানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে জনসাধারণকে দেওয়া হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম। ছবি: এএফপি

আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। দেশটিতে ভাইস প্রেসিডেন্টের সংখ্যা ৫ জন। অথচ পুরো দেশে ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ৪টি। এমন অবস্থা আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় সব দেশে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এই মহাদেশে মৃতের সংখ্যা লাখ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশের ৪১টি দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য বরাদ্দ ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২ হাজারেরও কম। অথচ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ভেন্টিলেটর আছে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। যেমন: মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ৫০ লাখ জনগণের জন্য মাত্র তিনটি ভেন্টিলেটর আছে। লাইবেরিয়ায় একই সংখ্যক মানুষের জন্য আছে ৬টি ভেন্টিলেটর। আর আফ্রিকা মহাদেশের ১০টি দেশে কোনো ভেন্টিলেটরই নেই।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, ইউরোপ–আমেরিকার পর আফ্রিকা হতে পারে করোনাভাইরাসের নতুন উপকেন্দ্র। এই অঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ১১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা দেয় চীন। ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ১৯ মার্চ প্রথম এক দিনে এক হাজার ছাড়ায় মৃত্যু। ওই দিনে মারা যায় ১ হাজার ৭৯ জন। এপ্রিলে এসে ভয়াবহ রূপ নেয় করোনা। ২ এপ্রিল প্রথম এক দিনে ৫ হাজার ছাড়ায় মৃত্যু। আর ১০ এপ্রিল ছাড়িয়ে যায় ১০ হাজার। এরপর একটু কমলেও এপ্রিলে গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৬ হাজারের বেশি মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বিশ্বজুড়ে ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২২ লাখ ছাড়িয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্ত মানুষের সংখ্যা। একই সময়ে মারা গেছে দেড় লাখের বেশি মানুষ।

আফ্রিকা মহাদেশেও ছড়িয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আফ্রিকা নিউজ ডট কমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এই রোগে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে আফ্রিকায় ১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী নয়। ফলে এসব দেশের স্বাস্থ্যকাঠামোও উন্নত নয়। নতুন করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারে এখন আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো ভুগছে প্রচণ্ডভাবে। আফ্রিকার দেশগুলোতে ভাইরাসটির বিস্তার সেই তুলনায় এখনো কম। কিন্তু এর বিস্তার মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা এখনো আছে। সে ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবার উপকরণের অভাব আফ্রিকার দেশগুলোকে ভোগাবে। শুধু ভেন্টিলেটর নয়, এই মহাদেশের দেশগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও হাত ধোয়ার সাবানেরও অভাব আছে। অথচ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এগুলো খুবই প্রয়োজন।

জাতিসংঘের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সাব–সাহারা অঞ্চলের মাত্র ১৫ শতাংশে পরিপূর্ণ হাত ধোয়া কর্মসূচি চালু রাখা যেত। যেমন: ২০১৭ সালেও লাইবেরিয়ার ৯৭ শতাংশ বাড়িতেই ছিল না পরিচ্ছন্ন পানি ও হাত ধোয়ার সাবান।

ইথিওপিয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে ভেন্টিলেটর সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ। ছবি: এএফপি
ইথিওপিয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে ভেন্টিলেটর সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ। ছবি: এএফপি

এখন পর্যন্ত আফ্রিকার যেসব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেসব দেশে এর বিস্তার গতি অত্যন্ত বেশি। যেমন: গিনিতে প্রতি ৬ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। ঘানায় এটি হচ্ছে প্রতি ৯ দিনে। আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। ক্যামেরুনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো এসব দেশে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কম। এটি বাড়লে করোনা শনাক্তের সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশের ৫৫টি দেশে নিবিড় পরিচর্যা শয্যা আছে ৫ হাজারেরও কম। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য আছে ৫টি করে শয্যা। আর ইউরোপে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য আছে প্রায় ৪ হাজার নিবিড় পরিচর্যা শয্যা।

অবশ্য নতুন করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ কারফিউ ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপে তো আর স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাব মিটবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করোনাভাইরাসের কারণে আফ্রিকার অনেক দেশ ভুগবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নতুন করোনাভাইরাসের কারণে আফ্রিকা মহাদেশে আগামী ছয় মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।