করোনাকালে শিশুদের স্কুল নিয়ে যুক্তরাজ্য যা ভাবছে

স্কুলে অনুপস্থিত থেকে পাঠদান চললেও এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশুদের জন্য স্কুলে একটি সামাজিক কর্মকাণ্ড থাকে। ছবি: রয়টার্স
স্কুলে অনুপস্থিত থেকে পাঠদান চললেও এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশুদের জন্য স্কুলে একটি সামাজিক কর্মকাণ্ড থাকে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে এ সময় স্কুলগুলো সাধারণত খোলা থাকে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এখন সব স্কুল বন্ধ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, এর কোনো ঠিক নেই। সন্তানদের পড়াশোনার ভার এখন মা–বাবার হাতে। তবে বাসায় বসে অফিস করা, একই সঙ্গে সন্তানকে স্কুলের মতো করে পড়ানো মোটেও সহজ কাজ নয়। এ পরিস্থিতিতে সন্তানের পড়াশোনার বিষয়টি মা–বাবা কীভােব সমলাতে পারেন, তা নিয়ে বিবিসি অনলাইনে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

মা–বাবা যা করতে পারেন
প্রথমেই বলতে হয়, এটা আশা করা ভুল যে এ অবস্থায় একদম স্কুলের শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে নেবেন মা–বাবা। যুক্তরাজ্যের প্রধান শিক্ষক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সারা দেশের সব বাচ্চাকে হোম স্কুল সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা এটাও মনে করেন, অনেক মা–বাবার অফিসের কাজের ধরন জটিল। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের আগে অনেক স্কুল বাচ্চাদের বাড়ির কাজ দিয়েছিল। একই সঙ্গে লকডাউনের এই সময়ে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। তবে স্কুলগুলো এটা ধরে নিয়েছে যে সব মা–বাবা সন্তানদের পড়াশোনার এই বিষয় তদারকি করতে সক্ষম হবেন। শিক্ষাবিদেরা মনে করছেন, এমন পড়াশোনায় বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গণিত ও ইংরেজি শিক্ষার ওপর। স্কুলের স্বাভাবিক একটি ধারায় পড়ানো কঠিন।


ইউসিএল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের অধ্যাপক বেকি ফ্রান্সিস বলেন, এখন যে হোম স্কুলিং হচ্ছে, তা মূলত বাচ্চাদের জন্য একটি নিয়মিত রুটিন তৈরিতে মা–বাবাকে উৎসাহিত করা।

সহযোগিতা করবেন যেভাবে
ইউইএর অধ্যাপক হেলেনা গিলেপসি বলেন, বাসায় স্কুলের মতো পরিবেশ তৈরি করা কৌশলের বিষয়। তবে কয়েকটি বিষয় ঠিক করে কিছুটা পরিবেশ আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। যেমন—


১. রুটিন তৈরি করা—যদি সম্ভব হয, বাচ্চাকে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতমুখ ধুয়ে জামা পাল্টে, নাশতা করিয়ে দিতে হবে। তাহলে যখন স্কুল খুলবে ওদের রুটিনে কোনো পরিবর্তন আসবে না।


২. দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় চিহ্নিত করুন, যখন মা–বাবা শিশুদের নির্দিষ্ট প্রকল্প তৈরিতে সাহায্য করবেন। শিশুর নিজে নিজে করার মতো আরকটি প্রকল্প ঠিক করে দিন।


৩. স্কুল না থাকলে শিশুরা বাসায় বসে পড়াশোনা ও অঙ্কের অনুশীলন করতে চায় না। একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে তাদের তা করাতে হবে।

স্কুলের মতো সব করা কি সম্ভব
বিবিসির শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ইংরেজি, গণিত ও অন্য মূল বিষয়গুলো নিয়মিত পাঠদানের জন্য তার শিক্ষা পরিষেবা প্রসারিত করেছে। বিবিসির মহাপরিচালক টনি হল এটিকে এখন পর্যন্ত নেওয়া বিবিসির সবচেয়ে বড় শিক্ষা কার্যক্রম বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া সরকার ওক ন্যাশনাল একাডেমি নামে নতুন একটি জাতীয় অনলাইন স্কুল চালু করেছে, যা বিনা মূল্যে প্রতি সপ্তাহে ১৮০ ঘণ্টা পাঠদান কর্মসূচি চালাচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্ভুক্ত আছে ইউটিউবের ফ্রি স্কুল। যা বিভিন্ন দেশের সংবিধান, প্রবাল প্রাচীর, সৌরজগতের মতো বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও সরবরাহ করছে।

পাঠদানের বাইরে স্কুলের যে ভূমিকা
স্কুলে অনুপস্থিত থেকে পাঠদান চললেও এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশুদের জন্য স্কুলে একটি সামাজিক কার্যক্রম থাকে। লকডাউনের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে শিশুদের মেলামেশাও একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আর তাই অনলাইনে হলেও বাচ্চাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


প্রশ্ন হচ্ছে, স্কুল কবে খুলবে। বলা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের আগে হয়তো যুক্তরাজ্যে স্কুল খোলা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি কিছু প্রশ্ন উঠেছে যে স্কুল বন্ধ করলে কি আসলে করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব আনা সম্ভব? শিক্ষাবিদেরা মনে করেন, শিশুদের পড়াশোনা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যয়ের তুলনায় এই মূল্য তা দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। তবে সরকারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ক্রিস হুইটি এক প্রতিক্রিযায় বলেন, মহামারির সময় স্কুল শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ছিল না। তবে সংক্রমন কমানোর জন্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি ছিল।