বিল গেটসের অর্থায়নে তৈরি ভ্যাকসিন আসতে পারে ১২ মাসেই

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ছবি: রয়টার্স
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ছবি: রয়টার্স

নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলা, কোভিড–১৯ চিকিৎসায় এবং এর একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণায় অর্থায়ন করছেন বিল গেটস। মাইক্রোসফটের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা ও তাঁর স্ত্রীর দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এরই মধ্যে এ–সম্পর্কিত গবেষণায় সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরির সাতটি প্রকল্প চলছে তাঁর অর্থায়নে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এক বছরের মধ্যেই একটি সুসংবাদ বিশ্ববাসী পেতে পারে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে প্রচারিত ফরিদ জাকারিয়ার জিপিএসে দেওয়া বক্তব্যে বিল গেটস বলেন, 'সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা এক বছরের মধ্যে ছোট পরিসরে উৎপাদনে যেতে পারব। অবশ্য এই সময়সীমা আবার বেড়ে দুই বছরও হয়ে যেতে পারে।'

সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টা করছেন। মুশকিল হচ্ছে, এটা মহামারিকাল। আর টিকা তৈরিতে লম্বা সময় লাগে। মানুষকে রক্ষায় তৈরি করা টিকাই যেন আবার তার মৃত্যুর কারণ না হয়, তা নিশ্চিতের জন্যই অনেকগুলো পর্যায়ে সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা করে আসতে হয়। বর্তমানে বেশ কয়েকটি টিকা এমন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। সব কটি ধাপ পেরিয়ে যে টিকা একই সঙ্গে কার্যকর ও নিরাপদ বলে প্রমাণিত হবে, তা–ই শেষ পর্যন্ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে উল্টো বিপত্তি হতে পারে।

এই নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে বিল গেটস আবারও মনে করিয়ে দেন, ১৮ মাসের আগে একটি কার্যকর ও নিরাপদ টিকা পাওয়া কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ড. ফাউসির মতো আমিও এ ব্যাপারে আগের অবস্থানেই রয়েছি যে ১৮ মাস আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।'

সিএনএনের ওই অনুষ্ঠানে বিল গেটস অনেক বিষয়ে কথা বলেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনীতি আবার চালুর বিষয়ে তোড়জোড়, করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা নিয়ে করা ট্রাম্পের মন্তব্যসহ নানা বিষয়। বিল গেটস বলেন, 'অর্থনীতি আবার চালুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি অংশগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর তা ধীরে ধীরে খুলে দিতে হবে। আগামী শীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলবে, তা নির্ধারণ করতে পারলে ভালো হয়। এমনকি সৃজনশীল পন্থায় কলেজগুলোও খুলে দেওয়া যেতে পারে। আগস্টের মধ্যেই আমরা কী করতে হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাব। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি তাড়াহুড়া করলে তা আমাদের উল্টো পিছিয়ে দিতে পারে।'

শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়েই এখন পর্যন্ত দ্বিমত পোষণ করেছেন বিল গেটস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের পুরোপুরি বিপরীত মত তাঁর। ট্রাম্প যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কোভিড–১৯ মোকাবিলায় ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে এর তহবিলে অনুদান দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বিল গেটস সংস্থাটির ভূমিকার বিষয়ে কিছুদিন আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্পষ্টভাবে দুর্দান্ত কাজ করছে। এই সময়ে তাদের বিভিন্ন দিক থেকে বাড়তি সহায়তা পাওয়া উচিত।' শেষের বাক্যটি যে ট্রাম্পের উদ্দেশে, তা বুঝতে আর কষ্ট করতে হয় না।