করোনারোধী মাস্ক যেসব দেশে বাধ্যতামূলক

মুখে মাস্কের ব্যবহার এই করোনভাইরাসকে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণে বাধা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মুখে মাস্কের ব্যবহার এই করোনভাইরাসকে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণে বাধা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমানোর লক্ষ্যে বহু দেশ ঘরের বাইরে মুখে সুরক্ষা মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। কোনো কোনো দেশে জন সমাবেশে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দেশে নির্দেশ না মানলে জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।

মুখে মাস্কের ব্যবহার এই করোনভাইরাসকে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ বাধা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তবে যাঁরা অসুস্থ বোধ করছেন এবং কাশি ও হাঁচি দিচ্ছেন বা যারা সংক্রামিত কাউকে দেখাশোনা করছেন, তাঁদের এটি পরা প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও বলছে, মাস্ক পরা তখনই কার্যকর হবে, যখন হাত ভালো করে জীবানুনাশক দিয়ে ধোয়া হবে। এই দুটি মিলিয়ে সংক্রমণ কমানো সম্ভব। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মাস্ক যেখানে বাধ্যতামূলক
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র প্রথম দেশ, যারা সুপারমার্কেট, ওষুধের দোকান ও গণপরিবহণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে। ১৮ মার্চ এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে তারা। ২৫ মার্চ থেকে স্লোভাকিয়া এটি অনুসরণ করে। মজার বিষয় হচ্ছে, জনগণকে মাস্ক পরা উৎসাহিত করতে প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপুতোভা ওই দিন নিজের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি লাল মাস্ক পরে এসেছিলেন। ২৯ মার্চ থেকে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক করে বসনিয়া হার্জেগোভেনিয়া। ৬ এপ্রিল মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে অস্ট্রিয়া। বিশেষ করে কেনাকাটার সময় এটি ব্যবহার করার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়।

উত্তর আফ্রিকায় মরোক্কো ৭ এপ্রিল থেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে। সরকার সতর্ক করে দেয়, যদি এই নির্দেশ কেউ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ হাজার ৩০০ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। একই দিনে তুরস্ক তার সব নাগরিককে জনসমাগম, কেনাকাটায় বা পরিদর্শন করার সময় মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়। সরকার জানায় প্রতিটি পরিবারে মাস্ক সরবরাহ করা হবে।

১৬ এপ্রিল পোল্যান্ড ঘরে তৈরি মাস্ক বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক করে। পার্ক সৈকতের পাশাপাশি সরকারি জায়গা যেমন রাস্তা, নগর প্রাঙ্গণ, ধর্মীয় স্থান, বাণিজ্যিক কাজের জায়গা, কেনাকাটায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।

২১ এপ্রিল জ্যামাইকা একটি নতুন সংশোধিত কারফিউ জারি করে একই সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই নিয়মের মধ্যে জনসমাগমে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক রয়েছে।

২৩ এপ্রিল জার্মানির প্রায় সব রাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে। পরিবহনসহ কেনাকাটায় মাস্ক সবাইকে পরতেই হবে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, উত্তর প্রদেশ ও ওডিশাসহ পশ্চিমবঙ্গে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মাস্ক পরায় গুরুত্ব দিচ্ছে না যেসব দেশ
বিভিন্ন দেশের সরকার মাস্ক পরার ওপর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) মার্কিন নাগরিকদের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ননমেডিকেল বা কাপড়ের মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়।

মজার বিষয় হচ্ছে, সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই নির্দেশিকার বিষয় বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই পরামর্শ অনুসরণ করবেন না। সুইজার‍ল্যান্ড সুইডেনের মতো দেশও নিশ্চিত করেছে যে তারা নাগরিকদের মাস্ক পরতে কোনো চাপ দেবে না।

করোনা প্রতিরোধে মাস্ক কতটা কার্যকর, তা নিয়ে অনেক মত থাকলেও বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, অস্ট্রিয়ায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পর আক্রান্তের হার ৯০ শতাংশ কমে এসেছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সংক্রমণের বিস্তার কিছুটা হলেও কমাতে সক্ষম হয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ।