করোনা প্রতিরোধে কার কৌশল কার্যকর, খুঁজছেন গবেষকেরা

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অনেক দেশ লকডাউন দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অনেক দেশ লকডাউন দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ঠেকাতে কোন দেশের প্রতিরোধ কৌশল সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে, তা খুঁজছেন গবেষকেরা। তাঁরা বিভিন্ন দেশের ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধী ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে তার তুলনা করে দেখছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে নেচার ডটকম–এর প্রতিবেদন।

নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ কীভাবে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তার একটি শিক্ষা বিশ্বকে দিয়েছে হংকং, অথচ এটি চীন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। ৭৫ লাখ জনসংখ্যার হংকংয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ৪। গবেষকেরা হংকংয়ের পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দেখেছেন। তাদের দ্রুত নজরদারি, কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্বের মতো পদক্ষেপ করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কাজে দিয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ফেস মাস্ক ব্যবহার, স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলো কাজে এসেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে গৃহীত এসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা কতখানি, তা বিজ্ঞানীদের অন্যতম প্রশ্ন। তাঁদের আশা, শেষ পর্যন্ত তাঁরা (চলাচলে) নিয়ন্ত্রণ রেখে এবং নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার বিষয়টি কীভাবে সংক্রমণ হার এবং সংক্রমণের সংখ্যাকে প্রভাবিত করে, তা সঠিকভাবে অনুমান করতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া তথ্যটি লকডাউন তুলে দেশগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে যথাযথ কৌশল প্রণয়নে সাহায্য করবে। এমনকি সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ ঠেকাতেও কাজে আসবে।

লন্ডন স্কুল হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের (এলএসএইচটিএম) গণিতের মডেলার রোজালিন্ড এগো বলেন, ‘এটা পরবর্তী মহামারির বিষয় নয়। আমরা এখন কী করব, এটা সে–সম্পর্কিত ধারণা দেবে। গবেষকেরা ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রভাব বুঝতে বিভিন্ন দেশের পৃথক ডেটা বা তথ্য ব্যবহার করছেন। বিশ্বজুড়ে ডেটা একত্র করার ফলে গবেষকেরা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া তুলনা করতে পারবেন।’

গবেষকেরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে গৃহীত ব্যবস্থার একটি ডেটাবেইস তৈরি করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য তৈরি এলএসএইচটিএমের প্ল্যাটফর্মে ১০টি গ্রুপ তথ্য দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কমপ্লেক্সিটি সায়েন্স হাব ভিয়েনা, এসিএপিসির মতো নানা অলাভজনক সংস্থা।

সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য নিখুঁত এবং একত্র করে ডেটা সেট তৈরি করা হবে, যা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ভিয়েনা ও অক্সফোর্ডের দল ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ভিয়েনা দলটি ৫২টি দেশের ১৭০ ধরনের হস্তক্ষেপ দেখতে পেয়েছে। অন্যদিকে অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ গভর্নমেন্ট রেসপন্স ট্র্যাকারে ১০০টি দেশে ১৩টি হস্তক্ষেপ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে, উভয় গ্রুপের বিজ্ঞানীরা প্রতিটি দেশের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য অনুসন্ধান করার জন্য তাদের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করছেন।

সিএসএইচ ভিয়েনার গাণিতিক পদার্থবিদ নিল হাগ বলেন, তাঁদের এ পদক্ষেপের ফলে গবেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন যে কীভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিলে এবং অপসারণ করলে সময়ের সঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যার পরিবর্তন ঘটবে। নীতিনির্ধারকেরা নিবিড় পরিচর্যা সক্ষমতার ডেটার সঙ্গে এজাতীয় পূর্বাভাস ব্যবহার করে বিদ্যালয় পুনরায় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য যথাযথ টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকানোই একমাত্র উপায়। প্রতিটি নিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপের প্রভাব জানা থাকলে লকডাউন দেওয়া বা সরানোর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। কোন পদক্ষেপ নিলে সবচেয়ে ভালো হবে—এটা জানা থাকলে করোনার সংক্রমণ ঠেকিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।