করোনায় ফ্রান্সে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিল গত ডিসেম্বরে

ফ্রান্সে কোভিড–১৯ হানা দিয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরেই। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সে কোভিড–১৯ হানা দিয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরেই। ছবি: এএফপি

ফ্রান্সের প্যারিসের কাছে গত ২৭ ডিসেম্বর এক রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে শনাক্ত হয়। ওই রোগী আদতে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসক। অর্থাৎ, ইউরোপে গত জানুয়ারির শেষে নয়, বরং তারও এক মাস আগে ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

চিকিৎসক ড. ইভ কোহেন জানান, সেই সময় সংগৃহীত কিছু নমুনা পরীক্ষার পর তা কোভিড–১৯ পজিটিভ প্রমাণিত হয়।

আক্রান্ত ও ব্যক্তি পরে পুরোপুরি সেরে ওঠেন। তবে তিনি কোথা থেকে কীভাবে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তিনি ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছিল, এমন কোনো অঞ্চলে সে সময় ভ্রমণ করেননি।

ইউরোপে ভাইরাসটির সংক্রমণের এটিই সম্ভবত সবচেয়ে পুরোনো উৎস। যেকোনো সংক্রামক রোগ ছড়ানোর শুরুর বিন্দুটি সম্পর্কে জানাটা রোগটি মোকাবিলার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথম কে কীভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তা জানার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট জীবাণুর বিস্তারের ধারাটি বোঝা সম্ভব।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্যারিসের নিকটস্থ আভিসিন অ্যান্ড জ্যঁ–ভেরদজি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. ইভ কোহেন জানিয়েছেন, প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির বাস প্যারিসের উত্তর–পূর্বের ববিগনি অঞ্চলে। তিনি নিশ্চিতভাবেই ১৪ থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কারণ, করোনাভাইরাসের উপসর্গ প্রকাশ পেতে ৫ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। তাঁকে ২৭ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মধ্যে কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ কোভিড–১৯–এর সব উপসর্গই ছিল।

ওই রোগী ভর্তির চার দিন পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীন কার্যালয় জানতে পারে যে উহান প্রদেশে অজানা কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলছে।

ড. কোহেন বিবিসি অনলাইনকে বলেন, তাঁর রোগীর দুই সন্তানও অসুস্থ হয়েছিলেন। তবে তাঁর স্ত্রীর মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। রোগীর স্ত্রীই সম্ভাব্য বাহক হতে পারেন বলে মনে করছেন ড. কোহেন। কারণ, তিনি চার্লস দ্য গল বিমানবন্দর–সংলগ্ন এক সুপার মার্কেটে কাজ করেন, যেখানে বিভিন্ন দেশের যাত্রীরা বাজার করতে আসেন। সেখানেই চীনফেরত কারও সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন বলে মনে করছেন চিকিৎসক। ড. কোহেন বলেন, সম্ভবত তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।

ইউরোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে যেমনটি মনে করা হয়, তার বহু আগেই হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক হওয়া বা এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই এটি ঘটেছিল। ফ্রান্সে এত দিন আনুষ্ঠানকিভাবে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান গত ২৪ জানুয়ারি পাওয়া গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। আর এই প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিও ছিলেন আবার উহানফেরত। প্রথম তিন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গেই উহানের যোগ ছিল কোনো না কোনোভাবে।

কিন্তু ড. কোহেন বলছেন, সবাই যখন চীনের উহানের দিকে তাকিয়ে, তখন গত বছরের শেষাশেষি খোদ ফ্রান্সের প্যারিস থেকে একটু দূরেই দেখা মিলেছিল প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির। এ তথ্য সত্য হলে একই সময়ে ইউরোপের অন্য অনেক প্রান্তেও এমন রোগীর অস্তিত্ব হয়তো ছিল, যাঁদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর এরই দায় শোধ করতে হয়েছে এবং হচ্ছে ইউরোপকে।

শুধু ইউরোপ কেন, যুক্তরাষ্ট্রেও সম্প্রতি এক মৃত ব্যক্তির সুরতহাল প্রতিবেদনে জানা গেছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর এই তথ্য বলছে যে এখন পর্যন্ত যে ধারণা করা হয়, তারও এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল।

বিষয়টি নতুন করে ভাবার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এই সংক্রমণের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ড. কোহেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর কাছে থাকা ওই রোগীর নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার জন্য। ওই ব্যক্তিই প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি হলে ভাইরাসটির সংক্রমণের ধারা নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিশেষত ফ্রান্সের মাটিতে ভাইরাসটি কীভাবে ছড়াল, সে সম্পর্কে আরও সবিস্তারে জানা সম্ভব হবে।