করোনায় সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে

ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স
ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুতেই থামছে না। কোথাও মৃত্যু কমলে, বেড়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করলে মহামারির বিস্তার ঘটছে অন্য কোনো দেশে। তবে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন বা গুরুতর অবস্থার রোগীর সংখ্যা কমছে।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ২ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৭২ হাজার।

সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চললেও গত ৩০ এপ্রিল থেকে বিশ্বজুড়ে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে। করোনা মহামারি ছড়ানোর পর গত ২৯ এপ্রিল সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৫৯ হাজার ৮১৭ জন সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর পরদিন ৩০ এপ্রিল এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার কমে ৫০ হাজার ৯৫৬ জন হয়। এরপর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিনই সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা কমছে। বুধবার করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগী ছিল ৪৮ হাজার ২১৪ জন। এর পরদিন, গত বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৯৬২ জন। আর গতকাল রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৮ হাজার ৫৫২ জন সংকটাপন্ন রোগী।

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে নাকাল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের মোট রোগী এবং মৃত্যুর প্রায় এক–তৃতীয়াংশ এই দেশে। সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যার দিক দিয়েও একই অবস্থা। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৯৮ জন সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে গত বৃহস্পতিবার করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ১২৯ জন। সব মিলিয়ে দেশটিতে মৃত্যু গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ছুঁই ছুঁই। আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ২৯ হাজারের বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন রোগী এখন ব্রাজিলে, ৮ হাজার ৩১৮ জন। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে বৃহস্পতিবার করোনায় মারা গেছেন ৬০০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রাজিলে ওই দিন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। এই পরিস্থিতির পরও দেশটির সরকার লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রিও, ব্রাসিলিয়াসহ বিভিন্ন বড় শহরে লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে।

তবে ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী পাউলো গুয়েদেস বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছেন, করোনা মহামারি ঠেকাতে আরোপ করা লকডাউনের কারণে তাঁর দেশ অর্থনৈতিক ধসের মুখে পড়তে পারে। খাদ্যসংকট ও সামাজিক বিশৃঙ্খলাও দেখা দিতে পারে ব্রাজিলে।

এদিকে গতকাল টানা ষষ্ঠ দিনের মতো রাশিয়ায় করোনা সংক্রমিত ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার হলো। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে রাশিয়া এখন ইউরোপের চতুর্থ শীর্ষ দেশ। আর সংকটাপন্ন রোগীর দিক দিয়ে পঞ্চম। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে সংকটাপন্ন রোগী ছিল ২ হাজার ৩০০ জন। গতকাল দেশটিতে মারা গেছেন ৯৮ জন। সব মিলিয়ে রাশিয়ায় মারা গেছেন ১ হাজার ৭২৩ জন।

রাশিয়ার বেশির ভাগ রোগী মস্কোতে। রোগী ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বৃহস্পতিবার এই শহরে লকডাউনের মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এই শহরে গণপরিবহন ও দোকানে মাস্ক ও গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ। না হলে জরিমানা গুনতে হবে।

বিবিসি জানায়, করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই অবস্থান করছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে মৃত্যু ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখের বেশি মানুষ। সরকারি তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগী আছেন ১ হাজার ৫৫৯ জন।

এএফপি জানায়, ইতালিতে গতকাল মারা গেছেন ২৪৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগী ৩০ হাজার ছাড়াল। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার। ইতালিতে সংকটাপন্ন রোগী রয়েছেন ১ হাজার ৩০০ জনের কিছু বেশি।

সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায়ও। এনডিটিভি জানায়, ভারতে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৯ হাজারের বেশি করোনা রোগী। এর মধ্যে গতকালই শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি। গতকাল মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মারা গেলেন ১ হাজার ৯৮৫ জন। ডন জানায়, পাকিস্তানে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে গতকালই শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার। দেশটিতে মৃত্যু ৬০০ ছাড়িয়েছে।