করোনার সংক্রমণ যেন কোনোভাবেই গ্রামে না পৌঁছায়, সতর্ক করলেন মোদি

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, করোনার সংক্রমণ যাতে কোনোভাবেই গ্রামে না পৌঁছয় তা সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। এটাই এই মুহূর্তে আমাদের সবার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

তৃতীয় দফার লকডাউন শেষ হলে দেশের কোথায় কেমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত ও কোথায় কতটা শিথিল হবে তা বুঝতেই সোমবার বিকেলে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে মিলিত হন। করোনার মোকাবিলায় এটি তাঁর পঞ্চম বৈঠক।

সরকারি সূত্রে আভাস, যেসব এলাকায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া ও কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, সেগুলোকে বাদ দিয়ে অন্যত্র জীবন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করা হবে। তবে সবকিছু পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে এখনো ঢের সময় বাকি।

বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ঘরে ফিরতে চায়। এটাই স্বাভাবিক প্রবণতা। যদিও এই ভাইরাসের মোকাবিলায় যে যেখানে রয়েছেন সেখানেই থাকা সেরা উপায়। কিন্তু মানুষের ইচ্ছার কাছে কোনো কোনো সময় হার মানতে হয়। এই কথার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, কিছু কিছু সিদ্ধান্ত সরকার নিতে বাধ্য হচ্ছে। তা ছাড়া জীবন রক্ষায় অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত জীবিকা হরণও চলে না। কাজেই ১৭ মে লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ তিনি নিতে চান।

ইতিমধ্যেই অবশ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন দূর পাল্লার কিছু ট্রেন চালানোর। আজ মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লি থেকে ১৫ জোড়া ট্রেন চালানো হবে যেগুলো দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ১৫টি শহরে যাবে। সেই শহরগুলো হলো, জম্মু, আসামের ডিব্রুগড়, ত্রিপুরার আগরতলা, বিহারের পাটনা, ঝাড়খন্ডের রাঁচি, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর, ওডিশার ভুবনেশ্বর, তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, তামিলনাড়ুর চেন্নাই, কেরালার তিরুবনন্তপুরম, গোয়ার মারগাঁও, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই সেন্ট্রাল ও গুজরাটের আহমেদাবাদ। সোমবার বিকেল থেকে এই সব ট্রেনের অনলাইন বুকিং শুরু হয়েছে। স্টেশনে ডাক্তারি পরীক্ষায় যাঁদের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়বে না, একমাত্র তাঁরাই ওই সব ট্রেনে যাত্রী হতে পারবেন। রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি ট্রেনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের সমতুল্য। যাত্রাপথে তিনটির বেশি স্টেশনে কোনো ট্রেন থামবে না। যাত্রীদের শারীরিক দূরত্বের দিকে নজর দেওয়া হবে। প্রত্যেক যাত্রীকে মুখোশ পরতেই হবে। যাত্রী ছাড়া অন্য কাউকে প্ল্যাটফর্মে আসতে দেওয়া হবে না।

সোমবারের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে সরাসরি আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, করোনা নিয়ে কেন্দ্র রাজনীতি করছে। রাজ্যে রাজ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এটা রাজনীতির সময় নয়। অথচ কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অস্বীকার করে রাজ্যকে অসুবিধায় ফেলছে। করোনার মোকাবিলায় একতরফা ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁদের জিজ্ঞাসারও প্রয়োজন মনে করছেন না। রাজ্যকে না জানিয়েই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে। এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে যেন রাজ্য পরিস্থিতির মোকাবিলায় ব্যর্থ।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন সহ বিভাগীয় কর্তারা।

রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় ৪ হাজার ২১৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এটা রেকর্ড। এই আশঙ্কার মধ্যে আশার আলো এই যে সুস্থতার হার ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ।