করোনায় দক্ষিণ এশিয়ায় যা করছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের বিস্তার সারা বিশ্বের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর যে অপ্রত্যাশিত হুমকি তৈরি করেছে, সেটা দৃশ্যমান। বিশ্বকে কোণঠাসা করে ফেলা ভাইরাসটির মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বড় বড় দেশ। করোনাকে মোকাবিলা করে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখা, অভিবাসীদের সুরক্ষা আর রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) অব্যাহত রাখা ও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য যোগ করা —এ তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য কর্মকৌশল ও নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম।

গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য তিনটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। সরবরাহ ব্যবস্থা, অভিবাসন ও রেমিট্যান্স এবং অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা—এই তিনটি বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্কিং গ্রুপগুলো নির্ধারিত বিষয়ে কর্মকৌশল ও নীতি প্রণয়নের বিষয়ে সুপারিশ করবে।

করোনাভাইরাস সমস্যা মোকাবিলার জন্য ডব্লিউইএফ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অ্যাকশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এতে যোগ দিয়েছে প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান। এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় ছয়টি আঞ্চলিক গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যার অন্যতম দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গ্রুপটি। দক্ষিণ এশিয়া গ্রুপের অধীনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ওই তিনটি ওয়ার্কিং গ্রুপ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড- ১৯ মোকাবিলায় ডব্লিউইএফের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কৌশলগত গ্রুপের প্রথম ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নেন। ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাবের অন্যতম ছিল সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করা এবং অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া।

ডব্লিউইএফের কমিউনিটি লিড ও গ্লোবাল লিডারশিপ ফেলো শেখ তানজীব ইসলাম শনিবার জেনেভা থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ভারতের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইডিএফসি সরবরাহ ব্যবস্থা, গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক অভিবাসন ও রেমিট্যান্স–বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে নেতৃত্ব দেবেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপগুলো প্রতিবেদন ডব্লিউইএফকে জমা দেবে।

শেখ তানজীব ইসলাম জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘের পুঁজি উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নীতি প্রণয়নের কাজটি করে থাকে। ডব্লিউইএফ সরকারি ও বেসরকারি দুটো খাতকে নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই এ দুটি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মতো সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে করোনা মহামারিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য নীতি প্রণয়নে সহযোগিতা করতে চাইছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের কাজের সঙ্গে যুক্ত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের মতো দেশের প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে রেমিট্যান্স ও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে দুটি বিষয়ে নীতিমালা ঠিক করা এ মুহূর্তে জরুরি। যেমন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ভারত। সে তুলনায় বাংলাদেশ গুটিকয়েক পণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তাই বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নীতি কৌশল ঠিক করার পরামর্শ বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষজ্ঞদের ভিডিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ফেলো মো. শহীদুল হক। তিনি অভিবাসন ও রেমিট্যান্স–বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন।

শনিবার প্রথম আলোকে মো. শহীদুল হক বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে রেমিট্যান্স গত বছরের তুলনায় ২০ ভাগেরও বেশি কমবে। অবধারিতভাবে মহামারির প্রভাব পড়তে যাচ্ছে অভিবাসনের ওপর। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে অভিবাসনের এবং রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাবটা কমানো যায়, তা নিয়ে অভিবাসন আর প্রবাসী আয়বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে।

শহীদুল হক জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়ার ফলে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। এটা সবার জন্য নতুন এক শিক্ষা। কাজেই ভবিষ্যতে মহামারিসহ যেকোনো সংকট এলে বিকল্প উপায় বের করে নিতে হবে, যাতে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকে। বৃহস্পতিবারের ভিডিও কনফারেন্সে বলা হয়েছে, নতুন এই সরবরাহ ব্যবস্থা কীভাবে হবে, কেমন হবে, সে সম্পর্কে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরবে।