পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে আঘাত হানবে 'আম্পান'

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উত্তাল দীঘার উপকূল। ছবি: সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উত্তাল দীঘার উপকূল। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায় শুরু হয়েছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশায় এ ঝড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকা থেকে গত দুই দিনে ৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। ত্রাণসহ তাদের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কলকাতার আলীপুর আবহাওয়া দপ্তরের উপমহাপরিচালক (পূর্বাঞ্চল ) সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ বুধবার বিকেলে আম্পান আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গে। এর গতিবেগ সর্বাধিক হতে পারে ১৮৫ কিলোমিটার। একই সঙ্গে এটি ভারতের ওডিশা রাজ্য ও বাংলাদেশে আঘাত হানবে।

পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা রাজ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এনডিআরএফ প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মহাপরিচালক এসএন প্রধান বলেন, এই দুই রাজ্যে ৩৭ টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল গঠন করা হয়েছে।

সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিকেলের দিকে আম্পান পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপূরের দীঘা ও বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝে সুন্দরবন অঞ্চলে প্রচণ্ড আঘাত হানতে পারে। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সমুদ্র উপকূলে ৪ থেকে ৬ মিটার এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ৩ থেকে ৫ মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। বিকেলে ৩টা বেজে ২০ মিনিটের দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্রে জোয়ার আসবে। তখন আছড়ে পড়ার সময় আম্পানের শক্তি কিছুটা কমে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এসময় এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ১৬৫ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। যা বেড়ে পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তিনি বলেন, বুলবুল, আয়লা ও ফণীর চেয়ে আরও ভয়াবহ হতে পারে এই আম্পান ।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সচিবালয় নবান্নে গতকাল এক সংবাদ সন্মেলনে বলেন, ঘোর দুর্যোগ আসছে। রাজ্য সরকার মুখ্য সচিব রাজীব সিনহার নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে আম্পান দীঘার ৪৫০ কিলোমিটার দূরে আবস্থান করছিল। আজ রাতে তিনি রাজ্যসচিবালয় নবান্নে রাত কাটাবেন। পর্যবেক্ষণ করবেন আম্পানকে। কাঁচাবাড়ি, পুরনো বাড়ি, টালি বা টিনের ছাউনি বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের নিকটবর্তী পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

কলকাতা বিমানবন্দরে থাকা ছোট ১০টি বিমানকে রাখার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বারানসি, গুয়াহাটি ও রাচি বিমানবন্দরে। কলকাতা বিমান বন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে আছে ৫২টি বিমান। এগুলো সব বড় বিমান। ঝড়ে এগুলো উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। নিরাপত্তার কারণে ছোট ১০টি বিমানকে অন্য রাজ্যে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার ৩টি, ইন্ডিগো'র ৪টি ও স্পাইজেটের ৩টি ছোট বিমান।