করোনার টিকায় বিশ্বে ১২৫ উদ্যোগ, প্রতিদিনই অগ্রগতি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, 'আমি খুব আশাবাদী। ১২৫টি টিকার প্রচেষ্টা চলছে।

কখনোই কোনো রোগের জন্য এতগুলো টিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এত রকমের পদ্ধতিতে হয়নি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা ১০টি টিকার মধ্যে সব কটিরই প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে।'

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি নোভাভ্যাক্স করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম দফার পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দেয় ২৫ মে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাকসিন একজনের শরীরে প্রয়োগ করে এই পরীক্ষা শুরু করেছে। জুলাই মাসে এর ফল পাওয়া যেতে পারে।
ডব্লিউএইচওর তালিকা অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য এখন বিশ্বব্যাপী ১২৫টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে ১০টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) বা মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো টিকার নতুন অগ্রগতির কথা আসছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে।
গত এপ্রিল মাসের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছিলেন, নতুন করোনাভাইরাসের টিকা গবেষণা অতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ১৫ মে নাগাদ সংস্থাটির খসড়া তালিকায় ১১৮টি উদ্যোগের তথ্য ছিল। তালিকা অনুযায়ী ১০টি টিকা মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর ১১৫টি প্রাক্‌-পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়ে গেছে। তালিকায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে থাকা ১০টি টিকার ৬টিই চীনের।
যেসব টিকার প্রয়োগ চলছে, এর মধ্যে নোভাভ্যাক্সের টিকা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার নোভাভ্যাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্ট্যানলি এরক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, করোনা মহামারিতে সামনের সারির কর্মীরা সবার আগে একটি ভ্যাকসিন পাবেন। এ টিকা এই বছরের শেষের দিকে আসতে পারে। টিকার দাম প্রসঙ্গে স্ট্যানলি বলেন, তাঁর সংস্থার সম্ভাব্য টিকার সাশ্রয়ী দিক বিবেচনায় ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করতে হবে।
​বিজনেস ইনসাইডার-এ ২২ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডব্লিউএইচওর তালিকায় থাকা ১০টি টিকার মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান এন্ড্রু পোলার্ড বলেন, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের এ কর্মসূচিতে আরও ১০ হাজার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
প্রথম ধাপে এক হাজার মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় শিশু এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপের এই পরীক্ষায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং ৫ থেকে ১২ বছর শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গত ২৪ মে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষা শেষ হোক বা না হোক, এ বছরের শেষের দিকে কিছু মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চীন। দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান গাউ ফু এ কথা বলেন। গাও ফু বলেন, কে এই ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য যোগ্য হবে, তা নির্ধারণে নির্দেশিকা তৈরি করছে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি।
মানবজাতিকে মহাবিপদে ফেলা করোনাভাইরাস রুখতে এমন উদ্যোগেই আশাবাদী হতে চান আইসিডিডিআরবির অধ্যাপক ফেরদৌসী কাদরি। তিনি বলেন, এবার যে বিষয়টি বেশি আশাবাদী করে তোলে তা হলো, এই টিকার জন্য অর্থের সংস্থান আছে। সব দিক থেকে প্রচেষ্টা আছে।