হাতির মৃত্যুর ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি ভারতের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে জনমতের কাছে মাথা নোয়াল রাষ্ট্র। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দুই তরফেই বলা হলো, কেরালায় হাতির অপমৃত্যুর তদন্ত হবে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বৃহস্পতিবার বলেন, যেভাবে অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে মারা হয়েছে, তা ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ নয়। একই সুরে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনাদের উদ্বেগ বৃথা যাবে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বহু মানুষ এই হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে বয়ে গেছে প্রতিবাদের তুফান। অমানবিক আচরণে ছি ছি করেছে মানুষজন। সে কথার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, তিনজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। একটা তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছে। পুলিশ ও বন দপ্তর একযোগে ওই ঘটনার তদন্ত করবে। ন্যায়বিচারের জন্য সরকার সবকিছু করবে।

খাবারের সন্ধানেই সম্ভবত কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যান থেকে মল্লপুরমের লোকালয়ে চলে এসেছিল অন্তঃসত্ত্বা ওই হাতি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে বিস্ফোরক ভর্তি আনারস খেতে দেয়। সেটি মুখে পুরতেই বিস্ফোরণ ঘটে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে আহত হাতিটি। কিন্তু কারও কোনো ক্ষতি না করে যন্ত্রণা উপশমের চেষ্টায় সে ভেলিয়ারি নদীতে গা ডুবিয়ে পড়ে থাকে। ওভাবে দিন কয়েক পর ২৭ মে তার মৃত্যু হয়। বন বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তি মারফত খবরটি প্রচার পায়। ক্রমেই জানা যায়, গত এপ্রিল মাসেও এই ধরনের ক্ষত নিয়ে মৃত্যু হয়েছিল আরও এক হাতির।

স্থানীয় কৃষকেরা বন্য শুয়োরের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ফলের ভেতর ছোট ছোট পটকা বেঁধে রাখেন। ফসল খেতে গেলে সেই পটকা ফাটে, যাতে বন্য শুয়োররা ভয় পেয়ে পালায়। কেরালার বন্য প্রাণী ওয়ার্ডেনের কর্তা সুরেন্দ্র প্রধান সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রচলিত ওই রীতিতে সাধারণত যে ধরনের পটকা বাঁধা হয়, তা খুবই ছোট। প্রাণী তাতে ভয় পেয়ে পালায়। সেই ধরনের পটকাবাজিতে বড় হাতির মৃত্যু অস্বাভাবিক। এই হাতির মৃত্যুর পেছনে বড় ধরনের বাজি ব্যবহৃত হয়েছিল কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ।

হাতির মৃত্যুর খবর জানাজানি হতে সারা দেশে ক্ষোভের বন্যা বয়ে যায়। বয়ে যায় নিন্দার ঝড়। মনুষ্যত্বহীনতায় ব্যথিত মানুষজন নানাভাবে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। একের পর এক স্কেচ আঁকা হয়। অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মুখর হতে থাকেন সাধারণ মানুষ থেকে পরিচিত ব্যক্তিত্বরা। ঘটনার বীভৎসতায় স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশ। কেরালা দেশের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য। সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি।

তার উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে কেউ লেখেন, ‘সাক্ষরতা শিক্ষার প্রতিফলন ঘটায় না।’ হাতির ছবি এঁকে কেউ লেখেন, ‘আমরা তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তোমরা বিশ্বাসঘাতকতা করলে।’ বিশিষ্ট শিল্পপতি রতন টাটাও স্তম্ভিত। এক টুইটে তিনি এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি শোকাহত। পরিকল্পিত হত্যার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো পার্থক্য নেই। ন্যায়বিচার হোক।’