লাদাখে ভারত-চীন আলোচনা শুরু

কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছিল শুক্রবারই, সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে ভারত ও চীনের সামরিক স্তরের বৈঠক হলো আজ শনিবার। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চুসুল সেক্টরের মালডোতে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং। চীনের নেতৃত্বে ছিলেন তিব্বতের সামরিক কমান্ডার।

গত এক মাস ধরে অব্যাহত সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের স্থানীয় পর্যায়ের সেনা কর্তারা একাধিক বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু তাতে সমাধান না হওয়ায় শনিবারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের বসে। এর আগে সীমান্ত বিরোধ মেটাতে দুই দেশের মধ্যে এত উঁচু পর্যায়ে সামরিক আলোচনা হয়নি।

শুক্রবারই কূটনৈতিক কথাবার্তার শুরু। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব নবীন শ্রীবাস্তব ভিডিও কনফারেন্স করেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহা পরিচালক উ জিয়াংহাওয়ের সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়,বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যের সম্পর্ক যথেষ্ট ইতিবাচক। দুই দেশই মনে করে, রাষ্ট্রীয় নেতাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে যে কোনো মতপার্থক্যের মীমাংসা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। আর সেই ক্ষেত্রে একে অন্যের সংবেদনশীলতা, উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা প্রয়োজন। বিবৃতিতে বলা হয়,দুই দেশের কেউই একে অন্যের পক্ষে ভীতিপ্রদ বা বিপজ্জনক নয়। দুই দেশেরই দেখা দরকার মতপার্থক্য যেন মতানৈক্য বা বিবাদে পরিণত না হয়।

ওই বিবৃতিই আজকের উচ্চ সামরিক আলোচনার সুরটা বেঁধে দিয়েছিল। আজ সকাল সাড়ে আটটায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা শুরু হয় তিন ঘন্টা পর বেলা সাড়ে এগারোটায়। এক ঘন্টা পর বেলা সাড়ে বারটায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত ও চীনের কর্মকর্তারা সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে উদ্ভুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় এই প্রচেষ্টা নিয়ে কোনো রকম জল্পনা বা ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করা উচিত হবে না। বলা হয়, সংবাদ মাধ্যম যেন এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকে।

বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বৈঠক শেষ হয়। ভারতীয় প্রতিনিধি দল এরপর ফিরে যান। বৈঠকে কী হলো সে বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে শুধু এটুকু বলা হয়, দুই দেশের কর্মকর্তারা স্বীকৃত সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বিদ্যমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চালাবেন। সেনা সূত্রের খবর, বৈঠক শেষে লে ফিরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং বৈঠকের গতি প্রকৃতি জানাবেন সেনাধ্যক্ষ মনোজ মুকুন্দ নারাভানেকে।

ভারতের অভিযোগ, সম্প্রতি লাদাখের একাধিক জায়গায় এলএসি লঙ্ঘন করে চীনা ফৌজ ভারতীয় এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে হাতাহাতিও হয়। ছয় বছর আগেও এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। তখনও সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিবাদের নিষ্পত্তি হয়েছিল।