সিডনিতে নিষেধাজ্ঞা বাতিল, ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ

নামে আন্তর্জাতিক ফোল্ডারে ছবি আছে/ক্যাপশন: যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আজ সিডনিতে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
নামে আন্তর্জাতিক ফোল্ডারে ছবি আছে/ক্যাপশন: যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আজ সিডনিতে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

একদম শেষ মুহূর্তে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। ফলে আজ শনিবার বিনা বাধায় বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে সিডনিতে। গতকাল শুক্রবার একই আদালত সিডনিতে আজকের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন।যদিও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগেই দলে দলে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন সিডনির টাউন হলে। বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় বেলা তিনটার কিছু আগে আদালতে আপিল করা রায়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। সঙ্গে সঙ্গে জয়োল্লাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তারপর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এই বিক্ষোভ চলে। সিডনির প্রাণকেন্দ্র টাউন হলে জড়ো হন হাজার হাজার সাদা-কালো মানুষ।

হাতে হাতে ন্যায়বিচারের দাবির বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের পতাকাসহ নেচে-গেয়ে এই সংহতি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন তাঁরা। আশপাশের রাস্তা ও সিডনির প্রসিদ্ধ হাইডপার্কেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী হত্যাসহ বিভিন্ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। মানুষের মুখে মাস্ক ও হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেননি। এই বিক্ষোভে সিডনিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে জর্জ ফ্লয়েডের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ ছাড়া বিক্ষোভ শুরু হওয়ার ঠিক আগে সিডনির টাউন হলে শুধু কালো নয়, সাদাও ম্যাটার—এমন ইঙ্গিতপূর্ণ ‘অল লাইভস ম্যাটার’ প্ল্যাকার্ড হাতে একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ পাল্টা প্রতিবাদকারী হিসেবে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পুলিশ দ্রুত তাঁকে সরিয়ে নেয়। তবে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর হাতের প্ল্যাকার্ডটি ছিঁড়ে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে গতকাল করোনাভাইরাসের রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের কারণে এই বিক্ষোভ সমাবেশকে ‘অবৈধ’ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের পুলিশ। পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় সিডনিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামের এই বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিলেন দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট।

জুনের ১ তারিখ থেকে সিডনি শহরের রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ সহজ করা হলেও এখনো বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজ্যটির সামাজিক দূরত্ব আইনে ৫০০ জনের বেশি লোকের জমায়েত অবৈধ।

অন্যদিকে, সিডনিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে হলেও অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশি হেফাজতে নিহত হওয়া দেশটির আদিবাসী মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। সমাবেশে অস্ট্রেলিয়াতে অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের নিহত হওয়ার বিচারের দাবি ধ্বনিত হয় বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আজ সিডনিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন সে দেশের আদিবাসীরাও। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আজ সিডনিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন সে দেশের আদিবাসীরাও। ছবি: রয়টার্স

২০১৫ সালে সিডনির লং বে জেলখানায় মারা যায় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী মানুষ ডেভিড ডুঙ্গয়ে। ডেভিড ডুঙ্গয়ের মা ল্যাটোনা ডে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামীকালের সমাবেশে তাঁকে পদযাত্রা থেকে কোনো কিছুই থামাতে পারবে না। ‘আমরা এই ভূমির মালিক এবং আপনারা আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে অতীত থেকে আজ অবধি যা ঘটছে, তা দেখতে পেয়েছেন...বর্ণবাদ এখনো এখানে বিদ্যমান...এবং এটাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।’ আজ সিডনির বিক্ষোভে ডেভিড ডুঙ্গয়ের পরিবার সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল কমিশন ইনটু অ্যাবরিজিনাল ডেথসের জাতীয় প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে দেশটির ৪৩২ জন আদিবাসী নিহত হন।

সিডনি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, ব্রিজবেন, অ্যাডিলেড, ওয়াগাওয়াগাসহ অন্যান্য বড় বড় শহরেও শান্তিপূর্ণভাবে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।