রংধনু সেতুর লাল রং ও দেউলিয়া কোম্পানির সুরক্ষার আবেদন

করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সতর্কসংকেত হিসেবে টোকিওর রেইনবো ব্রিজ বা রংধনু সেতুতে জ্বলছে লাল আলো। ছবি: রয়টার্স
করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সতর্কসংকেত হিসেবে টোকিওর রেইনবো ব্রিজ বা রংধনু সেতুতে জ্বলছে লাল আলো। ছবি: রয়টার্স

জাপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দেওয়ায় সাফল্য ধরাছোঁয়ার মধ্যে চলে এলেও চিহ্নিত সংক্রমণের দৈনিক হিসাবে ওঠানামা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছে না প্রশাসনকে। বিশেষ করে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি জনসংখ্যার শহর রাজধানী টোকিওতে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর নতুন চিহ্নিত সংক্রমণের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১০–এর সামান্য উঁচুতে ঝুলে থাকায় পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় রাজধানীবাসীদের ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া থেকে বিরত আছে মেট্রোপলিটন প্রশাসন। তবে ইতিবাচক দিকটি হলো, নতুন এসব সংক্রমণের পথ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্রুত চিহ্নিত করে নেওয়া সম্ভব হওয়ায় যথাযথ পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ এই ক্ষেত্রে নিতে পারছে। গত কয়েক দিনে সংক্রমণ মূলত ছড়িয়ে পড়েছে পানশালা, নাইট ক্লাব ও কারাওকে বার থেকে। ফলে সেসব স্থাপনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা কিংবা বন্ধ রাখা সম্ভব না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ তাদের প্রতি দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সামাল দেওয়ায় সাফল্যের আরেকটি মাইলফলক জাপানে আজ সূচিত হয়েছে মৃতের সংখ্যার মধ্য দিয়ে। জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় আজ এক ঘোষণায় জানিয়েছে যে গতকাল ৭ জুন দেশের কোথাও করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মার্চ মাসের ৬ তারিখের পর থেকে মৃতের সংখ্যা জাপানে আবারও শূন্যে নেমে এল।

তবে তা সত্ত্বেও সতর্কতা বজায় রাখার অবস্থান থেকে সরে আসেনি টোকিওর মেট্রোপলিটন প্রশাসন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে না পারার চিহ্ন হিসেবে রাজধানীর মেট্রোপলিটন প্রশাসন ভবনে রাতের বেলায় জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে লাল আলো। একই লাল আলো জ্বলছে রাজধানীর আরেক পরিচিত স্থাপনা রংধনু সেতু বা রেইনবো ব্রিজে। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক সংখ্যা পাঁচের নিচে নেমে না আসা পর্যন্ত এ রকম সতর্কতা প্রচার অব্যাহত রাখবে টোকিওর প্রশাসন। জাপানে ৭ জুন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার ৮৬৪ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৯৩২ জন।

বাড়ছে দেউলিয়া হয়ে পড়া কোম্পানির সংখ্যা

জাপানের নেতৃস্থানীয় একটি ঋণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী করোনাভাইরাস সংকটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় দুই শতাধিক কোম্পানি ইতিমধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে সুরক্ষার জন্য আবেদন করেছে। ফলে আরও কয়েক হাজার কর্মজীবী মানুষ এখন বেকার হয়ে যাওয়ার মুখে পড়েছেন।

দেউলিয়া হয়ে পড়া কোম্পানির তালিকায় শুরুতে বিদেশি পর্যটকদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত হোটেল ও ভ্রমণ গাইড ব্যবসায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও সংকট চলতে থাকা অবস্থায় দেশের ভেতরে ভোক্তাদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত অনেক কোম্পানি এখন সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ঋণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান টোকিও শোকো রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী জুন মাসের প্রথম কয়েক দিন পর্যন্ত ২১০টি কোম্পানি দেউলিয়া সুরক্ষার জন্য আবেদন জানায়। দেউলিয়া হয়ে পড়া এসব কোম্পানির প্রতিটির ঋণের পরিমাণ হচ্ছে এক কোটি ইয়েন থেকে শুরু করে আরও বেশি। এসব কোম্পানির তালিকায় সবচেয়ে পরিচিত একটি কোম্পানি হচ্ছে তৈরি পোশাক নির্মাতা রিনাউন, টোকিওর শেয়ারবাজারের প্রথম শ্রেণিতে যেটা তালিকাভুক্ত।

শোকো রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী ২০০–এর বেশি কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়ায় কমপক্ষে ৭ হাজার ৭০০ কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এই হিসাবে অবশ্য কেবল স্থায়ী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খণ্ডকালীন কর্মচারীদের সংখ্যা যোগ করা হলে বেকার হয়ে পড়া লোকজনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হবে।