আবারও বাড়ছে জাপানে দৈনিক চিহ্নিত সংক্রমণের সংখ্যা

করোনাভাইরাস। প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস। প্রতীকী ছবি

জাপান যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দেওয়া নিয়ে আশ্বস্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পথে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই কর্তৃপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে অদৃশ্য সেই শত্রু। রাজধানী টোকিওতে নতুন চিহ্নিত সংক্রমণ এখন পর্যন্ত আগের মতো ভয়াবহ হয়ে দেখা দেয়নি। কিন্তু গত কয়েক দিনের হিসাব রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে জাপানের নীতিনির্ধারকদের। গত শনিবার ২৪টি সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর গতকাল সেই সংখ্যা উন্নীত হয় ৪৭টিতে। এদিকে টোকিওর মেট্রোপলিটন সরকার আজ সোমবার ৪৮টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে।

বলা হচ্ছে, এই হিসাব এখন সরকারের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় একটি ঢেউয়ের আঘাত এখন জাপানের উপকূলে এসে উপস্থিত। অবশ্য সরকার বলছে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

রাজধানী টোকিওর আজকের ৪৮টি ঘটনার মধ্যে ২০টি নিশ্চিত করা হয়েছে নৈশক্লাব ও এ–জাতীয় রাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজনের ওপর পরীক্ষা চালানোর মধ্য দিয়ে। গতকালের ৪৭টি সংক্রমণের মধ্যেও সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সংখ্যাধিক্য ছিল। ফলে উৎসের সন্ধান সহজে জেনে যাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন টোকিওর শিনজুকু ওয়ার্ডের কাবুকি-চো এলাকার মতো বিনোদনের জায়গায় কর্মরত লোকজনের প্রতি ভাইরাস পরীক্ষা গ্রহণের আবেদন জোরদার করে নিচ্ছেন।

রাজধানী টোকিওতে শনাক্ত হওয়া সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চললেও আবারও জরুরি অবস্থার মতো পদক্ষেপে ফিরে যাওয়া সরকার বিবেচনা করে দেখছে না। বরং সংক্রমণের নতুন ঢেউ আঘাত হানলে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় সক্ষমতা যেন বাড়িয়ে নেওয়া যায়, সেদিকে এখন সরকার জোর দিচ্ছে। নতুন ওষুধ ও টিকা আবিষ্কারের গবেষণায় প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া ছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ আবিষ্কার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির ওপরও জাপান সরকার নজর রাখছে। সংক্রমণের আরেকটি ধাক্কা এলে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ টিকা যেন সহজেই হাতের কাছে থাকে সেই উদ্দেশ্যে সরকারের এই ব্যবস্থা গ্রহণ।

গতকাল প্রচারিত এক অনলাইন সম্প্রচারে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মডার্না এবং ব্রিটিশভিত্তিক কোম্পানি আস্ট্রা-জেনেকা’র সঙ্গে জাপান সরকার এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। সরকার চাইছে ভাইরাসের দ্বিতীয় একটি তরঙ্গ আঘাত হানার আগেই দেশের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ ও প্রতিষেধক টিকার মজুত যেন নিশ্চিত করে নেওয়া যায়। ওই দুই কোম্পানি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা ও ওষুধ আবিষ্কারে অনেকটা এগিয়ে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

ফলে জরুরি অবস্থা কিংবা লকডাউনের মতো অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দেওয়া পথে অগ্রসর না হয়ে সম্ভাব্য একটি দ্বিতীয় সংক্রমণ আঘাত হানলে রোগীদের যেন দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, সেদিকে এখন জাপানের নজর বেশি। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেকটা নিচে সীমাবদ্ধ থাকা। জাপানের চিকিৎসা গবেষকেরা এখন মনে করেন যে করোনাভাইরাসকে শুরুতে যতটা ভয়াবহ মনে করা হচ্ছিল, সে রকম মারাত্মক এটা নয়। বরং বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে আক্রান্তদের রোগমুক্ত করে নেওয়া যায়। ফলে জুতসই ওষুধ এখন তাদের কাছে অনেক বেশি কাম্য।

এসব দিক বিবেচনায় রেখে জাপান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা স্কুল-কলেজ আবারও বন্ধ করে দেওয়ার মতো ক্ষতিকর পথে অগ্রসর হতে চাইছে না। যদি নতুন সংক্রমণের হিসাব ঊর্ধ্বমুখী থাকে তবে না চাইলেও সীমিত পর্যায়ে হলেও কঠোর পদক্ষেপ হয়তো জাপানকে আবারও নিতে হতে পারে।