ভারত-চীন সংঘর্ষের পর আলোচনা অব্যাহত

লাদাখের গলওয়ান থেকে চীন সরেনি, তাদের সরে যাওয়ার দাবিতে ভারতও অনড়। এই অবস্থায় দুই দেশের সামরিক বাহিনীর বৈঠক বৃহস্পতিবারেও অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই বৈঠকের ফল সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। গত সোমবার দিবাগত রাতে দুই পক্ষে তুমুল সংঘর্ষের পর বুধবার যে বৈঠক হয়েছিল তা থেকে সমাধান সূত্র বের হয়নি।

বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলওয়ান সংঘর্ষে কোনো ভারতীয় জওয়ান নিখোঁজ হননি। খবর রটেছিল, বেশ কয়েকজন সৈন্যকে চীনারা নাকি অপহরণ করেছে।

গলওয়ান উপত্যকা দিয়েই এগিয়ে গেছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা। ভারতের অভিযোগ, চীনা ফৌজ সেই রেখা পেরিয়ে ভারতের জমির অনেকটা কব্জা করেছে। এ নিয়ে গত দেড় মাস ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ছিল। গত ৬ জুন সামরিক জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশেরই নিজস্ব অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চীন তা না মানায় সংঘর্ষ বাধে। তাতে ভারতের ২০ জন জওয়ান নিহত হন। গুরুতর আহত হন ৪ জন। ভারতের দাবি, চীনেরও ৪৫ জন সেনা হতাহত হয়েছে। যদিও চীন তাদের ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেনি। সোম–মঙ্গলবারের ঘটনার পর চীন গলওয়ান উপত্যকা তাদের বলে নতুন করে দাবি জানিয়েছে। ভারত বলেছে, চীনা আগ্রাসন পূর্বপরিকল্পিত।

গলওয়ান সংঘর্ষে ভারতের আহত জওয়ানদের উধমপুরের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। যে ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে সেনা সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্রের খবর, চীনা সেনাদের একটা ছাউনি সরানোর কথা বলতে গেলে পেরেক বসানো লোহার রড ও লাঠি হাতে তারা ভারতীয় জওয়ানদের আক্রমণ করে। আচমকা ওই আক্রমণে ভারতীয়রা হতচকিত হয়ে পড়েন। পরে আরো ভারতীয় জওয়ান এগিয়ে এলে দুই পক্ষে হাতাহাতি ও পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। বেশ কয়েকজন জওয়ান গলওয়ান নদীতে পড়ে ঠান্ডায় মারা যান। সেনা সূত্রের দাবি, চীনারা পরিকল্পনা করেই ভারতীয়দের ঘিরে ফেলেছিল। যে জায়গায় সংঘর্ষ বাধে, বৃহস্পতিবার সেনা পর্যায়ের বৈঠক সেখানেই বসে। ভারতীয় সেনাদের নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর জেনারেল হরিন্দর সিং।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনাদের অপ্রস্তুতি নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে সরাসরি জানতে চেয়েছেন দায়ী কে? বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় চীনা আচরণের নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘ভারতের নিরস্ত্র সেনাদের হত্যা করে চীন মারাত্মক অপরাধ করেছে। তবে আমার প্রশ্ন, দেশের বীর সৈনিকদের নিরস্ত্র অবস্থায় কে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে? এ জন্য কে দায়ী?’ রাহুলের পাশাপাশি সাবেক সেনা কর্তারাও জানতে চেয়েছেন, চীনকে ভারতীয় সেনারা কেন বিশ্বাস করেছে। যে দেশ বহুবার ভারতীয় জমিতে ঘাঁটি বসিয়েছে, তাদের বিশ্বাস করা মারাত্মক ভুল। সেনা সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে যাতে এমন অবস্থায় পড়তে না হয় সে জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সেনাদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। এই ধরনের আঘাত থেকে বাঁচতে বিশেষ ধরনের পোশাকের বর্ম ব্যবহারের কথাও ভাবা হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা ঠিকমতো করতে না পারার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যথেষ্ট সমালোচিত। এই অবস্থায় গলওয়ান সংঘর্ষ ও এতজন জওয়ানের মৃত্যু সরকারের কাছে এক বিরাট ধাক্কা। জনরোষ তীব্র। চীনা পন্য বয়কটের ডাক ধীরে ধীরে জোরাল হচ্ছিল। সংঘর্ষের পর তা আরো বেড়ে গেছে। টেলিকম পরিষেবায় চীনা যন্ত্র ব্যবহার না করার কথাও ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি অবস্থার সামাল দিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে সেই বৈঠক হবে। তার আগেই বিরোধীরা সরকারের সমালোচনায় মুখর।