লাদাখে ভারত এখন প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহার করবে

সম্প্রতি লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ফাইল ছবি রয়টার্স
সম্প্রতি লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ফাইল ছবি রয়টার্স

চীনের সঙ্গে লাদাখে সংঘর্ষের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের আগের নীতি থেকে সরে আসছে। এখন থেকে ভারতীয় ফিল্ড কমান্ডাররা ‘ব্যতিক্রমী’ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

ভারত ও চীন স্বাক্ষরিত ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে না। দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে প্রথম চুক্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সংঘাত যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় ওই চুক্তিতে।

১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর কয়েক দশক ধরে চলে আসা ওই নিয়ম এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। ওই লড়াইয়ে চীন হাতে তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

ভারতের এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে ৭৬ জন ভারতীয় সেনা আহত হয়েছেন। তাঁদের ওপর পেরেক বসানো লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।

সংঘর্ষে চীনের কত সেনা হতাহত হয়েছে, তা চীনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো নীরব চীন। দেশটির সরকারি গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত তথ্য নেই। সাংহাইয়ে একজন চীনা সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করে হতাহত হওয়ার যে সংখ্যার কথা বলেছেন বা মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য উদ্ধৃতকারী মার্কিন সাংবাদিক পল শিংকম্যান যে ৩৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। ভারত ও চীনের সংঘর্ষ নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো তথ্য নেই।

ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তি লঙ্ঘন করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হবে—এ কথার প্রতিক্রিয়ায় চীন সরকারের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক হু শিজিন টুইট করেছেন, তাঁদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে তা হবে চুক্তির ভয়ানক বরখেলাপ এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতীয় পক্ষকে কড়া মাশুল গুনতে হবে।

ভারতে লাদাখ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তোপের মুখে পড়েছে মোদির সরকার। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর ছেলে রাহুল মিলে সরকারের তীব্র সমালোচনা করছেন।

বিরোধীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে জানান, ভারতের সীমানায় ঢুকে চীনা সেনারা কোনো ছাউনি বা পোস্ট দখল করেনি। এক ইঞ্চি জমিও কবজা করতে পারেনি; বরং ভারতের জওয়ানরা আগ্রাসী চীনাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন যা করেছে, তাতে সারা দেশ আহত, ক্ষুব্ধ। ভারতীয় সেনা জল, স্থল ও অন্তরিক্ষ—সবদিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।

মোদি বলেন, চীনকে কূটনৈতিক পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারত শান্তি চায়। কিন্তু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ গত পাঁচ বছরে সরকার করেছে। নিজেদের সবদিক থেকে প্রস্তুত রেখেছে। দেশ আমাদের কাছে সবার আগে। কোনো চাপের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। যা প্রয়োজন, সব করবে। সেনারা সীমান্ত রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। তাদের সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, গোটা দেশ এই সংকটে এক। এই একতা গোটা পৃথিবীর কাছে বার্তাবহ।

ভারতের দিল্লিভিত্তিক বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে গতকাল রোববার জানানো হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়া সফরের আগে চীন পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে চীন কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিলে তার কড়া জবাব দেওয়ার জন্য সব ধরনের স্বাধীনতা ভারতীয় বাহিনীকে দেওয়ার কথা বলেন।

উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ বাড়িয়েছে চীন। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ৯ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে চীনের সেনারা লাদাখের নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় ২০০টি ট্রাক এনেছে। এ ছাড়া চার চাকার আরও কিছু ভারী যান এবং বুলডোজার এনেছে। স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যমটি।