কে পিছু হটবেন: নরেন্দ্র মোদি না সি চিন পিং?

সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স
সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

বাড়ির সীমানায় শত্রু রেখে বাইরে লড়ে কত দূর যাওয়া সম্ভব? ভারতের সঙ্গে লাদাখ সীমান্তের সংঘর্ষের পর প্রশ্নটা এখন চীনকে করতে শুরু করেছেন অনেক বিশ্লেষক। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, আসলে ‘ঝি’কে মেরে ‘বউ’কে শেখানোর কৌশল নিয়েছে চীন। আসলে তারা ভারতের মার্কিন ঘনিষ্ঠতা আর মহাপরাক্রমশালী হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব নিয়ে বেশ সতর্ক হয়ে উঠেছে। তাই দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভারতকে শিক্ষা দিতে কঠোর হওয়ার পথটাই বেছে নিয়েছেন।

বর্তমানে ভারতের মোদি সরকারের ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ঝুঁকে পড়ার যে নীতি নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে ভারতকে চীনবিরোধী জোটের অগ্রসৈনিক ভাবা হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক চাপে থাকা চীন এখন চাপের বদলে চাপ দেওয়ার নীতিতে এগোচ্ছে। তারা ভারতকে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চারদিক থেকে চাপে ফেলতে মরিয়া। আগে থেকে পাকিস্তান তো আছেই, এখন পাশে পেয়েছে নেপালকেও। ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশকেও চীনের কাছে টানার ইঙ্গিতের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ঘরের পাশে ভারতের সঙ্গে শত্রুতা জিইয়ে রাখার সামর্থ্য চীনের আছে কি না, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

গত ৫ মে নতুন করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা এবং ১৫ জুন ২০ ভারতীয় সেনার প্রাণহানির মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন আলোচনা জন্ম হয়েছে। গার্ডিয়ান বলছে, চীনের সেনাবাহিনী মধ্যযুগীয় কৌশলে ভারতীয় সেনাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এ নিয়ে ভারত দাবি করেছে, ১৫ জুন গালওয়ানে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তা ঘটার মূল কারণ চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা-সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় স্থাপনা উৎখাত করতে চেয়েছিল এবং ওই কর্মকাণ্ড থামাতে চায়নি। তবে নিজেদের ঘাড়ে কোনো দোষ নেয়নি চীন। চীনা দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা ৬ জুনের চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং তাদের সেনাদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় পক্ষ ৬ জুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা গালওয়ান নদীর মোহনা পেরিয়ে টহল দেওয়ার ও স্থাপনা তৈরি করতে পারবে না এবং উভয় পক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দুঃখজনকভাবে ১৫ জুন সন্ধ্যায় কমান্ডার স্তরের বৈঠকে চুক্তির লঙ্ঘন করে ভারতীয় সেনারা। এই সময় গালওয়ান উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। তখন তারাই ইচ্ছাকৃত উসকানির জন্য আবার এলএসি পার হয়ে গেল এবং আলোচনার জন্য সেখানে যাওয়া চীনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছিল। এভাবে মারাত্মক সংঘর্ষ ও হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স
নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স

মানববসতিহীন হিমালয় পর্বতমালার যে অংশের দাবি নিয়ে এ সংঘাত বেধেছে, তা বহু আগে থেকেই এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে দুই দেশ। একাধিক চুক্তিও করেছে তারা। পরস্পরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার যে শর্ত এত দিন ধরে মেনে চলেছে তারা, হঠাৎ তা শীতল হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি আগে থেকে সেখানকার নদীতে বাঁধ দিয়ে রেখেছিল। ভারতীয় সেনারা অগ্রসর হলে সে বাঁধ ছেড়ে দেয়। পানির তোড়ে ভারতীয় সেনারা ভেসে যাওয়ার সময় তাদের ওপর পেরেক বসানো লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। কয়েক ঘণ্টা ধরে হাতাহাতি চলে। এতে অনেক ভারতীয় সেনা পাহাড় থেকে পড়ে মারা যায়। সংঘর্ষ শেষ হলে দেখা যায়, এই ঘটনায় ভারতের পক্ষে ২০ জন নিহত, কয়েক ডজন আহত। এ ছাড়া কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে আটক করে চীনা সেনারা। সংঘর্ষে চীনা সৈন্যও হতাহত হয়। তবে চীনের পক্ষ থেকে সে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

এ ঘটনার তাৎক্ষণিক তাৎপর্য কী? শুধু প্রাণহানি নয়, প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে চলে আসা এক নাজুক ঐকমত্যেও ফাটল ধরে যায় এতে। গত সপ্তাহের ওই লড়াইয়ের আগে গত ৪৫ বছরে দুই পক্ষের কোনো সৈন্য ওই সীমান্তে মারা যায়নি।

এর আগে ১৯৬২ ও ১৯৬৭ সালে লড়াই করেছে চীন ও ভারত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট পুরোপুরি আলাদা। দুটি দেশই সংঘর্ষ এড়িয়ে উত্তেজনা কমাতে চাইছে। প্রয়োজনে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে। সংঘর্ষের আগে থেকেই এ প্রচেষ্টা ছিল। এর মধ্যেই গত সোমবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গেছে। এখন মৃত সেনাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে দুটি পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের জাতীয়তাবাদের ঝান্ডাধারী ব্যক্তি হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিং। মুখোমুখি দুই নেতার সামনে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি। কে পিছু হটবেন?

নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স
নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স

গার্ডিয়ান তাদের বিশ্লেষণে বলছে, মোদি বা সি চিন পিং—দুজনের কারও রাজনীতিই এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দুর্বলতা দেখানোর কোনো সুযোগ রাখেনি। গত শনিবার চীনের পক্ষ থেকে ভারতকে উসকানি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ওই এলাকায় ভারতের অবকাঠামো তৈরির সমালোচনা করা হয়েছে। তবে ভারতের দাবি, তারা নিজেদের সীমানার মধ্যেই অবকাঠামো তৈরি করছে। বেশ কিছুদিন ধরেই চীনের পক্ষ থেকে সেনা জড়ো করার পাশাপাশি অবকাঠামো তৈরি করার পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) কাছে লড়াই হয়।

জার্মান মার্শাল ফান্ডের সিনিয়র ফেলো অ্যান্ড্রু স্মল এই পরিস্থিতি সম্পর্কে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, চীনের পক্ষ থেকে এটা অনেকটাই পরিকল্পিত প্রয়াস বলে তাঁর মনে হয়েছে। ওই সীমান্ত এলাকায় যে চিত্র দেখা যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আংশিক। বেশির ভাগ কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত ভারতীয় সূত্রের প্রকাশ করা। তাতে পরিষ্কার চীনা সৈন্যের উপস্থিতি দেখা যায়। চীনা সেনারা একাধিক স্থানে তাদের অবস্থান শক্ত করেছে। তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসির কাছে টহল জোরদার করার পাশাপাশি উপস্থিতি বাড়িয়েছে ও অবকাঠামো গড়েছে। এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া ঘটানো সম্ভব নয়।

চীন এখন কি লড়াই চালানোর মতো অবস্থায় আছে? গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে এ ব্যাপারে নেতিবাচকই বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী এ সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক এমা গ্রাহাম হ্যারিস লিখেছেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যায় জড়ানো বেইজিংয়ের জন্য এখন উপযুক্ত সময় নয়। দেশটিকে এখনো নানা দিক থেকে সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। ১৯৭০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। হংকংয়ে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আরোপিত নিরাপত্তা আইন বিশ্বপরিমণ্ডলে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কোভিড-১৯–এর উৎস নিয়ে তদন্ত করতে বলায় চীনা কর্তৃপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় কানাডার সঙ্গেও চীনের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক ভারতের সীমান্তে চীনের বর্তমান আগ্রাসনকে এ–জাতীয় নানা অভ্যন্তরীণ চাপের ফল হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া হোঁচট খাওয়া অর্থনীতি আর বাণিজ্য খাতে শীর্ষ সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চাপে থাকা প্রেসিডেন্ট সির জন্য জাতীয় সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে কঠোরতা দেখানো ছাড়া অবশ্য অন্য পথ খোলা নেই।

সি চিন পিং  ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স
সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক টেলর ফ্রেভেল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তাঁর মতে প্রেসিডেন্ট সি যে চাপে পড়েছেন, তারই প্রতিক্রিয়া এটি। কোভিড ও বর্তমান আন্তর্জাতিক সমালোচনা, দেশে অর্থনৈতিক সংকট, বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি সংকেত দিতে চান যে চীন মাথা নত করবে না।

কেউ কেউ আবার চীনের বর্তমান আগ্রাসনকে সুযোগসন্ধানী তৎপরতা হিসেবে দেখছেন। গত দশকে অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার পর বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে শুরু করেছে চীন। বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে কেউ গায়ে পড়ে চীনের সঙ্গে শত্রুতা করতে চাইবে না। মোদির কথাতেও সেই সুর। মোদির পক্ষ থেকেও গত শুক্রবার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ উত্তেজনা নিরসনে তিনি রাজনৈতিক মূল্য দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে মনে হয়েছে। মোদি বলেছেন, ভারতের সীমানায় কোনো চীনা সৈন্য অনুপ্রবেশ করেনি বা ভারতের কোনো জায়গা তারা দখল করতে পারেনি।

একটু পরখ করলে দেখা যাবে, মোদির মন্তব্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির সঙ্গে মেলে না। অর্থাৎ, নিজেদের অবস্থান বদলেছেন মোদি। সেই একই কথাই বলেছেন ভারতীয় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও। মোদির মন্তব্যের পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, বিশেষত টুইটারে অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ‘হিন্দু’র ন্যাশনাল ও ডিপ্লোমেটিক এডিটর সুহাসিনী হায়দার, লেখক ব্রহ্মা চেলানি, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–এর উপসম্পাদক সুশান্ত সিং।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এখন প্রশ্ন হলো মোদির কথা যদি ঠিক হয়, তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ভুল বা মিথ্যা বলেছে? গত বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং হির এক ফোনালাপের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ৬ জুন জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠকের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা নিরসন এবং সংঘাত এড়ানোর বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। গত সপ্তাহের এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সেখানকার কমান্ডাররা নিয়মিত বৈঠক করছিলেন। কিছু উন্নতিও ঘটেছিল। চীনা পক্ষ সীমান্তরেখার পাশে গালওয়ান উপত্যকায় একটি কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত এবং চীনা সেনারা পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষ বাধিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

অর্থাৎ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে চীনা সেনাদের গালওয়ান উপত্যকায় অবকাঠামো তৈরির প্রচেষ্টার কথা বলা আছে। কিন্তু মোদি তাঁর বক্তব্যে সে কথা স্বীকার করেননি।

মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুন ড্রেয়ার গার্ডিয়ানকে বলেছেন, চীনা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তারা কেন সামনে এগোবে না? এ প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ভারতের চেয়ে ৫ গুণ বড় চীনের অর্থনীতি। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটও ভারতের চেয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। আসল পার্থক্যটা অনেক বড়।

সি চিন পিং  ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স
সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

কিন্তু চীনের জন্য সীমান্তে বিরোধ বাধিয়ে যে ক্ষতিটা হয়েছে, সেটা অন্যখানে। ভারতীয় জনগণের মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়া হয়েছে। অনেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। এতে সরাসরি চীনা অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে, সেদিকে না গেলেও চীনাদের সম্পর্কে ভারতের উপলব্ধির খারাপ দিকটাও সামনে চলে এসেছে। অন্তত ভারতে সির কুশপুত্তলিকায় আগুন জ্বালানো সে কথাই বলে।

ভারতের এনডিটিভি বলছে, ভারত আপাতত তাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুক্তি থেকে সরে আসার কথা বলছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের আগের নীতি থেকে সরে আসবে এখন। ভারতীয় ফিল্ড কমান্ডাররা ‘ব্যতিক্রমী’ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তি লঙ্ঘন করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হবে—এ কথার প্রতিক্রিয়ায় চীন সরকারের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক হু শিজিন টুইট করেছেন, তাদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে তা হবে চুক্তির ভয়ানক বরখেলাপ এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতীয় পক্ষকে কড়া মাশুল গুনতে হবে।

বিশ্লেষকেরা এখন মনে করছেন, চুক্তি ভঙ্গ করে সংঘর্ষের বিষয়টি চীনের প্রতি ভারতীয়দের মনোভাব আরও শক্ত করবে। রাজনীতিবিদেরা কঠোর মনোভাব ধরে রাখবেন। এতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়তে বাধ্য। ওয়াশিংটনের ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের ইন্ডিয়া প্রজেক্টের পরিচালক তানভি মদন গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তিনি মনে করেন, সুযোগ হিসেবে দেখা ভারতের একটা প্রজন্মকে চীন হারাল। তারা চীনকে বিশ্বাস করবে না। চীনবিরোধী হাতটা শক্তিশালী হলো।

তবে এসব কিছুতে কি সি চিন পিংয়ের কিছু আসে–যায়? চীন যেভাবে কৌশলে প্রতিবেশীদের নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে ভারতেরও অনেক কিছু ভাবনার আছে বৈকি।