করোনাকে কাজে লাগিয়ে 'ক্ষমতা কুক্ষিগত' করার তালে তারা

করোনাভাইরাস মহামারিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের কোনো কোনো দেশের সরকার ‘ক্ষমতা আরও কুক্ষিগত করার’ চেষ্টা করছে, যা গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। এক খোলা চিঠিতে বিশ্বজুড়ে পাঁচ শতাধিক রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতা, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এভাবেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে।

‘গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান’ শীর্ষক ওই খোলা চিঠিটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টি ও নাগরিক সমাজকে জাগ্রত করতে লেখা এই চিঠিটির উদ্যোগ নিয়েছে সুইডেনের স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স (আইডিইএ)। এটি একটি আন্তসরকার প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে সহায়তা ও শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।

চিঠিতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট, ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী কারমান তাওয়াক্কুল, পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী হোসে রামোস-হোর্তা, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, বাংলাদেশ থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমুখ। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে পেন আমেরিকা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অন্যতম।

>

 বিশ্বের পাঁচ শতাধিক রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতা, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও মানবাধিকার সংগঠনের খোলা চিঠি।

চিঠিতে চলমান মহামারিকে ‘গণতন্ত্রের জন্য ভয়ানক চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন লেখকেরা। তাঁরা লিখেছেন, ‘এটা আশ্চর্যের নয় যে কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারগুলো তাদের সমালোচকদের দমনে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ জোরদার করতে এই সংকটকে কাজে লাগাচ্ছে। এমনকি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কিছু সরকারও মহামারি মোকাবিলায় আইনি বাধ্যবাধকতা না মেনে, সংসদীয় নজরদারি ব্যতিরেকে অথবা সাংবিধানিক শৃঙ্খলা আনতে কোনো প্রকার সময়সীমা না বেঁধে জরুরি অবস্থা জারি করেছে, যা মানবাধিকার সীমিত করেছে এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারি জোরদার করেছে। সংসদকে পাশে ঠেলে রাখা হয়েছে, সাংবাদিকদের আটক-গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নন-প্রফিট লয়ের তথ্যমতে, করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে ৮০টির বেশি দেশে জরুরি অবস্থা-সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দেশ কারফিউ দিয়েছে, কেউ অতিরিক্ত নজরদারির আওতায় বিধিনিষেধ ভাঙলে জরিমানা করছে, আবার কেউ নির্বাহী ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

আইডিইএর হিসাবমতে, মহামারির কারণে ইতিমধ্যে দেশে দেশে ৬৬টি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ জাতীয় নির্বাচন। গণমাধ্যমের ওপর কোনো না কোনোভাবে বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রায় ৫০টি দেশ। এর মধ্যে ২১টি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে। গণতন্ত্র হুমকিতে রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের এই ব্যবস্থা রক্ষায় রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সব জায়গায় স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য ও মানুষের মর্যাদা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।