করোনার চিকিৎসা-ব্যয়ে লাগাম টানলেন মমতা

গতকাল শুক্রবার নবান্নে মমতার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।
গতকাল শুক্রবার নবান্নে মমতার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনার চিকিৎসা-ব্যয়ের লাগাম টানতে এবার মাঠে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনার পরীক্ষার খরচ কমিয়ে নতুন করে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা বিনা অর্থে হলেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিজেদের ইচ্ছেমতো খরচার অর্থ নিত কর্তৃপক্ষ। সরকারিভাবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য খরচ সাড়ে চার হাজার রুপি ভারত সরকার বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ নেওয়া হতো। নেওয়া হতো অন্যান্য নানা খরচও।

গতকাল শুক্রবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার খরচ নিতে হবে ২ হাজার ২৫০ রুপি। সেই সঙ্গে পিপিই, কিট ও গিয়ার চার্জ নিতে হবে এক হাজার রুপি। আর চিকিৎসকদের রোগী দেখাতে হলে ফি নিতে হবে এক হাজার রুপি।

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে মেনে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। অ্যাসোসিয়েশন অব হটপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি দীপক বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মেনে নিচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব। তবে পিপিই এবং অন্যান্য খরচ একটু বৃদ্ধির আবেদন রইল আমাদের।’

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বাস চালু হলেও বহু বেসরকারি বাস ও মিনিবাস পথে নামেনি। তারা চাইছিল বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হোক। গতকাল মমতা জানিয়ে দেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানো হবে না। বাস চালাতে হবে আগের ভাড়াতেই। তবে তিনি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের মালিকদের কথা বিবেচনা করে আগামী জুলাই থেকে তিন মাসের জন্য রাজ্যের ছয় হাজার বাস ও মিনিবাসের মালিককে মাসে ১৫ হাজার রুপি করে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এখন রয়েছে ছয় হাজার বাস ও মিনিবাস। এর মধ্যে চলছে এখন মাত্র ২ হাজার ৫০০ বাস। তিনি আরও বলেছেন, কলকাতায় আরও নামানো হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০০ সরকারি বাস।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা গতকাল আরও বলেন, তিনি চান কলকাতায় মেট্রোরেলও চলাচল শুরু করুক। তবে ট্রেনের যতগুলো আসন, তত যাত্রী নিয়ে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কথা বলছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সব ঠিক হলে আগামী ১ জুলাই থেকে কলকাতায় মেট্রোরেল চালাতে চান মমতা।

মমতা বলেন, তিনি চান বিদেশ থেকে বিমান আসা বন্ধ করা হোক। তবে মাসে এক দিন আন্তর্জাতিক বিমান চালানো যেতে পারে। মমতা বলেন, ‘আমরা চাই না ভারতের বিভিন্ন হটস্পট থেকে করোনা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পাঠাক কেন্দ্র।’

এদিকে এত ছাড় দেওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গে বেড়ে চলেছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। আর এই সংখ্যা এখনো শীর্ষে রয়েছে কলকাতা মহানগরেই। গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪২ জন। এর মধ্যে কলকাতার ১২৮ জন। মারা গেছে ১০ জন। সব মিলিয়ে এখন এই রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ১৯০ আর মৃত মানুষের সংখ্যা ৬১৬। গতকাল সুস্থ হয়েছেন ৩৪৫ জন। এই রাজ্যে সুস্থতার হার এখন ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।