করোনার ৬ মাসে বিশ্বে যা ঘটল

বিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বকে ভোগাচ্ছে ছয় মাস ধরে। এই ভাইরাসের সংক্রমণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটির ওপরে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে এই সময়ে বিশ্বে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো:

৩১ ডিসেম্বর

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) চীনা সরকার নিশ্চিত করে, অজানা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২৭ জন রোগী পেয়েছে তারা।

জানুয়ারি ২০২০

১১ জানুয়ারি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রথম ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায়। দুই দিন পর চীনের বাইরে প্রথম রোগী পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। ১৫ জানুয়ারি জাপানে প্রথম রোগী শনাক্ত। চীনের উহান শহর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসা এক মার্কিন নাগরিকের শরীরে ভাইরাস ধরা পড়ে ২০ জানুয়ারি। ওই ঘটনার তিন দিন পর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান লকডাউন করা হয়। পরদিন ২৪ জানুয়ারি ইউরোপে প্রথম রোগী পাওয়া যায় ফ্রান্সে। ৩০ জানুয়ারি ডব্লিউএইচও বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং চীনে যাতায়াতে ভ্রমণ-সতর্কতা জারি যুক্তরাষ্ট্রের।

ফেব্রুয়ারি

২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম ফিলিপাইনে এক ব্যক্তি (৪৪) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়া ভ্রমণের পর জাপানের একটি প্রমোদতরি কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। এতে ৩ হাজার ৬০০ যাত্রী ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের নাম দেয় কোভিড-১৯। চীনে মৃত্যু ১ হাজার, আক্রান্ত ৪৪ হাজার ছাড়ায়। ইরানে সন্দেহভাজন এক করোনা রোগী মারা যান ১২ ফেব্রুয়ারি। দুই দিন পর ইউরোপের দেশ হিসেবে প্রথম ফ্রান্সে করোনায় মারা যান একজন। এশিয়ার বাইরে এটাই প্রথম মৃত্যু। ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউরোপে প্রথম বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত। তিনি ইতালি থেকে ফিরেছিলেন। ওই ঘটনার তিন দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যু হয়।

অক্সফোর্ডে প্রথম একজন রোগীকে করোনার টিকা দেওয়া হয়।  ছবি: সংগৃহীত
অক্সফোর্ডে প্রথম একজন রোগীকে করোনার টিকা দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

মার্চ

৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষা শুরু করে। তত দিনে বিশ্বে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৬ মার্চ বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ১১ মার্চ ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। স্ত্রী সোফি ট্রুডো আক্রান্ত হওয়ায় ১২ মার্চ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কোয়ারেন্টিনে যান। পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ১৬ মার্চ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পরদিন ফ্রান্স সরকার গোটা দেশ লকডাউন করে। ১৯ মার্চ চীনে স্থানীয় ব্যক্তিদের সংক্রমণ শূন্যে নেমে আসে। এদিন মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়ায় ইতালি। ২৩ মার্চ গোটা দেশ লকডাউন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২৪ মার্চ টোকিও অলিম্পিক ২০২১ সাল নাগাদ পেছানোর ঘোষণা। এদিন গোটা দেশ ২১ দিনের জন্য লকডাউন করে ভারত সরকার। ২৬ মার্চ করোনার সংক্রমণে সবাইকে ছাড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

এপ্রিল

২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ১০ লাখ ছাড়ায়; মৃতের সংখ্যা ছাড়ায় ৫১ হাজার। ৬ এপ্রিল করোনা সংক্রমিত হওয়ার ১০ দিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে ১২ এপ্রিল তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। ৮ এপ্রিল ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠান করোনার টিক তৈরির ঘোষণা দেয়। উহানে বিধিনিষেধ শিথিল। দুই দিন পর বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মানুষের শরীরে করোনার টিকা পরীক্ষা শুরু করে ২৩ এপ্রিল।

মে

১ মে করোনা চিকিৎসায় ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ায় ডব্লিউএইচও। ৩ মে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায় বিভিন্ন দেশ। ৬ মে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। ১৫ মে বিশ্বে সংক্রমণ ৪৫ লাখ ছাড়ায়। মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২২ মে রাশিয়াকে পেছনে ফেলে সংক্রমণে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ব্রাজিল।

জুন

৭ জুন বিশ্বে রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ; মৃত্যু ৪ লাখ ছাড়ায়। সংক্রমণ কমায় ৮ জুন বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিউজিল্যান্ড। ৮৩ দিন লকডাউনের পর ১৫ জুন বিভিন্ন দোকান খোলে যুক্তরাজ্যে। ১৯ জুন ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়; মৃত্যু প্রায় ৫০ হাজার। ১০০ দিন লকডাউন শেষে ২৩ জুন নিউইয়র্কের মানুষ বাইরে আসার সুযোগ পান। ২৮ জুন বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আক্রান্তের সংখ্যা হয় এক কোটি।