বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত জাপান

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে জাপানের কয়েকটি অঞ্চলে গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়াও প্রাণহানির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দক্ষিণ জাপানের বন্যা পরিস্থিতির একটি দৃশ্য। ছবিটি গত ৫ জুলাই তোলা। ছবি: রয়টার্স
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে জাপানের কয়েকটি অঞ্চলে গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়াও প্রাণহানির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দক্ষিণ জাপানের বন্যা পরিস্থিতির একটি দৃশ্য। ছবিটি গত ৫ জুলাই তোলা। ছবি: রয়টার্স

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের একটি আবহাওয়া বলয় এখন জাপানের ওপর ঝুলে আছে। আর এর প্রভাবে জাপানের কয়েকটি অঞ্চলে গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও। গত শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিমের কিউশু দ্বীপের কয়েকটি জেলায় আঘাত হানলে দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকার অপ্রস্তুত মানুষজন এতে আটকা পড়ে যান।

বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভূমি ও কাদার ধস নামলে মানুষের দুর্দশা আরও বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া বলয়টি ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার আগে কিউশুতে ৫৬ ব্যক্তির প্রাণহানি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও দশজনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন কিংবা উদ্ধার করা হলেও প্রাণের চিহ্ন এদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। মধ্য জাপানের গিফু ও নাগানো জেলা এখন বর্ষা কবলিত।

জাপানে বর্ষাকালের স্থায়িত্ব এক মাস এবং এখন তা শেষ হওয়ার পথে। ফলে অসময়ের এই বৃষ্টিপাত এবং প্রাণহানির সংখ্যার পেছনের কারণ বিশেষজ্ঞরা এখন বিশ্লেষণ করে দেখছেন। গত কয়েক দিনে দৈনিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ২০০ মিলিমিটারের বেশি। জাপানের জন্য এটা খুবই অস্বাভাবিক। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন—দেশের যে ৫১টি বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হিসাব করা হয়, তাতে দেখা গেছে গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে দৈনিক ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়া দিনের সংখ্যা সমানে বেড়ে চলেছে। এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে তারা দায়ী করছেন।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকায় সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে গিয়ে মেঘের আকার নিয়ে ঝুলে থাকে। প্রশান্ত মহাসাগর ও জাপান সাগরের ওপর ঝুলে থাকা এই বৃষ্টিপাত বলয় জাপানের ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলে ভারী বর্ষণ তা নিয়ে আসে। এবারের মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পেছনে এ রকম হিসাব কাজ করেছে। ফলে তারা বলছেন জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার বার্তা এবারের এই বর্ষণ নিয়ে আসছে।

অন্যদিকে জাপানের প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে। তবে এই প্রাণহানির পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনের চাইতে বেশি কাজ করছে অন্য কিছু হিসাব। দেশের জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকা অবস্থায় জাপানের দূরবর্তী অঞ্চলগুলো এখন হয়ে উঠেছে অনেকটাই বৃদ্ধ লোকজনের নিবাস। পল্লি অঞ্চলের তরুণদের অনেকেই উন্নত জীবন ও কাজের সুবিধার টানে দেশের বড় শহরগুলোর দিকে ধাবিত। ফলে বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলের ছোট ছোট গ্রাম ও শহর এখন হচ্ছে মূলত বৃদ্ধদের নিবাস। জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সেখানকার অনেক স্কুলও শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলে প্রচণ্ড বর্ষণ কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে বৃদ্ধদের পক্ষে দ্রুত বের হয়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়া সম্ভব হয় না। অনেক বাড়িঘরে বৃদ্ধরা একা বসবাস করায় চারদিকে কি হচ্ছে সেই বার্তাও এদের কাছে অনেক সময় পৌঁছায় না। ফলে বৃষ্টির সঙ্গে আসা ভূমি কিংবা কাদার ধসের মতো বড় আকারের দুর্যোগে ঘরে আটকা পড়ে যাওয়া অবস্থায় এরাই মারা যান বেশি। এবারের অতি বর্ষণও সেই একই ছবি আবারও জাপানের জনগণের সামনে তুলে ধরল। জাপানের মতো উন্নত একটি দেশি অতি বর্ষণে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়। ফলে করণীয় পদক্ষেপ কি হতে পারে, তা নিয়ে সরকারকে এটা নতুন করে ভাবাচ্ছে।