এক মাসের মধ্যে টিকা আনার চেষ্টায় রাশিয়া

করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এর প্রতিষেধক বা টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন কার্যকর ও নিরাপদ টিকা এবং চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এরই মধ্যে বেশ কিছু সম্ভাব্য টিকা উদ্ভাবনের দাবিও করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সম্ভাব্য টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এসব টিকার কোনোটিই অতি সম্প্রতি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তাঁরা এক মাসের মধ্যে করোনার টিকা আনার ব্যাপারে আশাবাদী।

মস্কোভিত্তিক ইংরেজি ভাষার অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য মস্কো টাইমস-এ গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা আগামী মাসেই রোগীদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এর আগে মস্কোর এক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তারা স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর সম্ভাব্য ওই টিকার সফল প্রয়োগ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে সারা বিশ্বে টিকা তৈরির নানা উদ্যোগ নিয়ে একটি খসড়া তালিকা রয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ তালিকায় ১৬০টি উদ্যোগের তথ্য ছিল। তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ২১ টিকা মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর ১৩৯টি প্রাক্-পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়ে গেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা ২১ টিকার মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের একটি টিকা আছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণার সঙ্গে আছে ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তারা জানিয়েছে, আগামী অক্টোবর নাগাদ টিকা আনার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। অক্সফোর্ডের টিকা ও চীনের সিনোভেকের টিকাটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে আছে। এ পর্যায়ে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাকি ১৯টি টিকা প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে আছে। আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান ইমিউনলজিক্যাল লিমিটেডের টিকা।

এ ছাড়া জার্মান জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়ো এন টেক ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ওষুধ উৎপাদনকারী ফাইজার ইনকরপোরেশন টিকা আবিষ্কারে যৌথভাবে কাজ করছে। তারা বলেছে, সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

দ্য মস্কো টাইমস-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার সম্ভাব্য টিকাটি উদ্ভাবন করেছে রাষ্ট্র পরিচালিত গামালি ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। মস্কোর দ্য সেচেনভ ফার্স্ট মস্কো স্টেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গত জুনে ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর সম্ভাব্য ওই টিকার প্রয়োগ শুরু করে। একই সময়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনী একই টিকার দুই মাসের পরীক্ষা চালায়।

গামালি সেন্টারের প্রধান আলেক্সান্ডার গিন্টসবার্গ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেন, তিনি আশা করছেন, আগামী ১২-১৪ আগস্টের মধ্যে সম্ভাব্য টিকাটি জনসাধারণের প্রয়োগের জন্য বাজারে আনা যাবে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেপ্টেম্বর নাগাদ ব্যাপক হারে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

সেচেনভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ইয়েলেনা স্মোলিয়ারচুক বলেছেন, গবেষণাটি শেষ হয়েছে। টিকাটি নিরাপদ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেচেনভ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীদের ২৮ দিন আইসোলেশনে রাখার পর একটি দলকে আজ বুধবার এবং আরেকটি দলকে আগামী সোমবার ছাড়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি। স্বেচ্ছাসেবীদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। আগামী ছয় মাস তাঁদের পর্যবেক্ষণ করা হবে।