ইরানের একটি বড় প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ

গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ার ঘটনা তেহরান ও নয়াদিল্লির মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ার ঘটনা তেহরান ও নয়াদিল্লির মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
>চীনের সঙ্গে বিশাল অংশীদারত্ব চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরই ইরান এই পদক্ষেপ নিল।

চীনের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদের একটি বিশাল দ্বিপক্ষীয় চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করেছে ইরান। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে করা একটি বড় রেল প্রকল্পের চুক্তি থেকে সরে গেল তেহরান। সম্প্রতি ইরান সরকার জানিয়েছে, নিজেদের অর্থেই শেষ করা হবে ওই প্রকল্প। একই সঙ্গে দেশটি বলেছে, প্রকল্প দেরি হওয়ায় এবং ভারত থেকে অর্থ পাওয়ার অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ইরান অনেক বেশি চীনমুখী। চীনও ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সদা তৎপর। তাই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ার ঘটনা তেহরান ও নয়াদিল্লির মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

ভারতের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও ও দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেহরান সফরে যান। ওই সময় ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর থেকে আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া ইরানি শহর জাহেদান পর্যন্ত ৬২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের জন্য ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিদেশীয় চুক্তি হয়। চুক্তিতে সই করেন মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের একটি বিকল্প বাণিজ্যপথ গড়ে তোলাই ছিল এই চুক্তির মূল লক্ষ্য।

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, ইরান ও ভারতের রেলওয়ে যৌথভাবে এই প্রকল্প পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে ওই রেল প্রকল্পের একাংশে লাইন পাতার কাজ একতরফাভাবেই উদ্বোধন করেন ইরানের পরিবহন ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী মহম্মদ এসলামি। পরে এই বিষয়ে ইরান সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভারতের কোনো সহায়তা ছাড়া তেহরানের রেল কর্তৃপক্ষ একাই ওই প্রকল্প পরিচালনা করবে। কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্যে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে ইরানের জাতীয় উন্নয়ন তহবিল। 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি এমনিতেই ভগ্নদশা। এর ওপর করোনাভাইরাস মহামারি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ‘বন্ধু দেশ’ ভারতের অর্থ ছাড়াই ইরানের একটি বড় চুক্তি শেষ করার প্রয়াস দেখে বিশেষজ্ঞরা ধন্দে পড়ে গেছেন। তাঁরা মনে করছেন, প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ার সম্ভাব্য দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমটা হচ্ছে, গত সপ্তাহে চীনের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদের হাজার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে তেহরান। জঙ্গিদের অর্থ ও অস্ত্রে মদত দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটাতে এই রকম চুক্তি তেহরানের খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েছে ভারতের। আবার ইরানের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে দিল্লির ওপর বহু দিন ধরেই চাপ বাড়াচ্ছিল ওয়াশিংটন। এই কারণেই ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এসব মিলিয়ে সিদ্ধান্তটা আসতে পারে। 

তবে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।