মায়ের করোনা গর্ভের সন্তানে

>৩১ জন সংক্রমিত গর্ভবতী নারীকে পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে, গর্ভের শিশুও মা থেকে সংক্রমিত হতে পারে।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মায়ের কাছ থেকে গর্ভের শিশুও সংক্রমিত হয় কি না, তা নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। তবে ফ্রান্সের একদল চিকিৎসক দাবি করেছেন, করোনায় সংক্রমিত মায়ের গর্ভের শিশুও সংক্রমিত হতে পারে। দেশটিতে এ রকম একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা।

এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ গত মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস। নিবন্ধে জানানো হয়, নবজাতকটির জন্ম হয় গত মার্চে। তার মস্তিষ্ক ফোলা ছিল। এর সঙ্গে আরও কিছু স্নায়বিক উপসর্গ ছিল। এ ধরনের উপসর্গ করোনায় সংক্রমিত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের মধ্যেই দেখা যায়। তবে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে।

ফ্রান্সের ওই গবেষক দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও প্যারিসের কাছেই অবস্থিত অন্টুয়ানা বেক্লেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডেনিয়েল ডি লুকা বলেন, এর আগেও একাধিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে করোনায় সংক্রমিত মায়ের গর্ভে থাকা ভ্রূণে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে ওই সব গবেষণায় প্রমাণ হাজির করা হয়নি। সেদিক থেকে নতুন এই গবেষণাই প্রথম অকাট্য প্রমাণ হাজির করল। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখাতে পেরেছি যে গর্ভাবস্থার শেষ সময়টাতে করোনায় সংক্রমিত মায়ের কাছ থেকে ভ্রূণ সংক্রমিত হতে পারে।’

এর আগে গত সপ্তাহে ইতালির একদল গবেষক দাবি করেন, ওই দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩১ জন করোনায় সংক্রমিত গর্ভবতী নারীকে পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে যে ভাইরাসটি মায়ের কাছ থেকে গর্ভের শিশুকে সংক্রমিত করতে পারে। গত মার্চেও এক গবেষণায় একই ধরনের দাবি করা হয়েছিল।

ডেনিয়েল ডি লুকা বলেন, মায়ের রক্তের নমুনা, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড, গর্ভের ফুল, নবজাতকের রক্তের নমুনা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করেই তাঁরা উপসংহারে পৌঁছেছেন। তবে মহামারির সময় এই সব কটি নমুনা পাওয়া দুষ্কর। কারণ, সব জায়গায়ই জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। 

গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, ডি লুকা ও তাঁর দল মার্চের শুরুর দিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক গর্ভবতী নারীর কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনা ও তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ওই নারীর বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়। নিবন্ধে আরও জানানো হয়, ওই নারীর গর্ভের ফুলে ব্যাপক পরিমাণে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখান থেকে নাড়ির মাধ্যমে ভাইরাসটি নবজাতকের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যারিয়ান নাইট বলেছেন, এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হাজারো মা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক কি দুই শতাংশের ক্ষেত্রে নবজাতকের শরীরেও ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। আর সংক্রমিত নবজাতকের মধ্যে খুব কমসংখ্যকেরই গুরুতর উপসর্গ দেখা দিয়েছে।