'প্রধান শত্রু' চীনকে দেখে নিতে তৎপর যুক্তরাষ্ট্র

চীনকে মোকাবিলায় বৈশ্বিক জোট গঠন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স
চীনকে মোকাবিলায় বৈশ্বিক জোট গঠন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে চীনের প্রভাব দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। তাই বেইজিংকে কোণঠাসা করতে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নানা তৎপরতা শুরু করেছে ওয়াশিংটন। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের লন্ডন সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রকাশ্যে চীনের বিষোদগার করেছেন। জানালেন, চীনকে মোকাবিলায় তাঁরা বৈশ্বিক জোট গঠন করতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের একটি কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

বাণিজ্য সমস্যা, হংকংয়ে চীনের নিরাপত্তা আইন কার্যকর ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে পম্পেও মঙ্গলবার লন্ডন সফরে আসেন। তিনি সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাবের সঙ্গে। ব্রিটেনে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নির্মাণকাজ থেকে চীনের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বরিস জনসনের উচ্চ প্রশংসা করেন পম্পেও। তিনি বলেন, এটা করা না হলে ব্রিটেনের নাগরিকদের তথ্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হাতে চলে যেতে পারত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, বর্তমান চীনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু। বাণিজ্য থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে অভিযুক্ত করেন ট্রাম্প। একসঙ্গে করোনাভাইরাসকে ‘চীনা প্লেগ’ নাম দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সত্য লুকিয়েছেন সি। 

পম্পেওর অভিযোগ, বেইজিং করোনাভাইরাস মহামারির সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ‘কলঙ্কিত উপায়ে’ এটাকে ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে চীনকে আগ্রাসী উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেইজিং অবৈধভাবে সমুদ্র দখল করেছে, হিমালয়ের দেশগুলোতে উসকানি দিয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাবকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের পম্পেও আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি জোট গঠন করতে পারি, যেটি চীনের হুমকি মোকাবিলা করবে এবং এক জোট হয়ে কাজ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে বুঝিয়ে দেওয়া, তাদের এ ধরনের আচরণে কোনো স্বার্থ সিদ্ধি হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, এ রকম দেশগুলোকে এই জোটে আমরা দেখতে চাই এবং ওই দেশগুলোকে বুঝতে হবে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের জন্য হুমকি তৈরি করছে।’

কূটনীতিকেরা বলেছেন, সাবেক ব্রিটিশ কলোনি হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকরের কারণে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে বরিস জনসনের সরকার যখন শক্ত অবস্থানে, তখন পম্পেওর এই লন্ডন সফর। চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ছাড়াও তাঁর এই সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো ব্রেক্সিট-পরবর্তী (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ) যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এগিয়ে নেওয়া। পম্পেও বলেন, এ রকম চুক্তি অনেক আগেই হতে পারত। কিন্তু হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব এটির সমাপ্তি টানা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বিবিসির খবর বলা হয়েছে, ওই ঘোষণার পর কনস্যুলেট ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অফিস বন্ধ করার আগে চীনের কর্মকর্তারা তাদের নথিপত্র হয়তো পুড়িয়ে ফেলছেন। হিউস্টন পুলিশ টুইটারে একটি পোস্ট লিখেছে, কনস্যুলেট থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে ওই ভবনে প্রবেশের অনুমতি পায়নি পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভয়ংকর এবং বিচারবহির্ভূত। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। এটি একধরনের রাজনৈতিক উসকানি ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, দেশটির মেধাস্বত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চীনও থেমে নেই। চীনের শিপইয়ার্ডগুলো প্রথমবারের মতো চীনের নৌবাহিনীর জন্য টাইপ ০৭৫ নামের দুটি উভচর যুদ্ধজাহাজ বানিয়েছে। এটি জল ও স্থল—উভয় থেকেই হামলা চালাতে সক্ষম।