বাংলাদেশি ক্রেতা নেই, কলকাতার ঈদবাজারে হতাশা

কলকাতা নিউমার্কেটের কাপড়ের দোকানে নেই ঈদের আগের সেই পরিচিতি ভিড়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা
কলকাতা নিউমার্কেটের কাপড়ের দোকানে নেই ঈদের আগের সেই পরিচিতি ভিড়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা

কলকাতা নিউ মার্কেটের নামী কাপড়ের দোকান ‘মিলন’। এর ব্যবস্থাপক চুনীভাই উমরানিয়া বলছিলেন, ‘আমাদের এই দোকান বাংলাদেশিদের কাছে খুব জনপ্রিয়। আমাদের ক্রেতার ৮০ শতাংশই বাংলাদেশি। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হয়েছে। এখন স্থানীয় কিছু মানুষ আসছে। কিন্তু বিক্রিবাট্টা নেই বললে চলে।’

এই দোকানটির মতো অবস্থা সব দোকানেই।

চুনীভাই বলেন, ‘আমাদের দোকান তো বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য ১২ মাসই জমজমাট থাকে। আর দুই ঈদে তো প্রচণ্ড ভিড় লেগে থাকে। এবার তা নেই। করোনায় আতঙ্কিত মানুষ।’

প্রতিবছর দুই ঈদের আগে কলকাতা নিউ মার্কেটজুড়ে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় জমে থাকে। কিন্তু নিউ মার্কেট, সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড—কোনোখানেই এবার বাংলাদেশের ক্রেতা নেই। এসব এলাকাসংলগ্ন হোটেলেও এখন ফাঁকা। কর্মচারীদের অধিকাংশই ছুটিতে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।

কলকাতা নিউ মার্কেটে এখন শুধু স্থানীয় ক্রেতারাই আসছেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতা নিউ মার্কেটে এখন শুধু স্থানীয় ক্রেতারাই আসছেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

দোকানিদের কথা, এই এলাকার ঈদের বাজার জমত বাংলাদেশের ক্রেতাদের নিয়ে। এখন বাংলাদেশি ক্রেতা নেই। হোটেল ফাঁকা। বাংলাদেশিরাও আসছেন না। ফলে তাঁরা হতাশ।

করোনা পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো কেড়ে নিয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দও। তাই এ বার ঈদুল আজহা এলেও ক্রেতাহীন ঈদবাজারের ছবি ভেসে উঠেছে কলকাতার সর্বত্র।

গতকাল নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ভিড় নেই। যা আছে সামান্য স্থানীয় লোকজন।

শুধু বাংলাদেশি নয়, ঈদের বাজার করতে আসতেন অন্যান্য রাজ্যের মানুষও। তাঁরাও আসছেন না এবার।

নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মো. আশরাফি বললেন, ‘সত্যিই আমাদের এই নিউমার্কেট এলাকার দোকানপাট টিকে আছে বাংলাদেশের ক্রেতাদের আগমনে। তারাই আমাদের মূল ক্রেতা। এখন বাংলাদেশি ক্রেতা নেই। আমরা হতাশ।’

শুধু কাপড়চোপড়ের দোকানিরাই নন, এ হতাশা অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।

নিউ মার্কেট প্রায় ফাঁকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
নিউ মার্কেট প্রায় ফাঁকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নিউ মার্কেটের ফলের দোকানদার ইফতেখার আসলাম বলেছেন, ‘আমার ফলের ক্রেতাদের অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশি পর্যটকেরা। তারা আজ নেই; তাই আমাদের বেচাকেনাও নেই।’

মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ম্যানেজার জালাল উদ্দিন আকবরের মুখেও এ কথা। বললেন, ‘বাংলাদেশি পর্যটক নেই। হোটেল ফাঁকা। আমাদের ব্যবসাও নেই। করোনার বিদায়ের পর আবার জমে উঠবে কলকাতার বাজারে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড়—এটাই এখন আমাদের প্রত্যাশা।’

কলকাতায় মূলত রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, মেটিয়া ব্রুজ, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিট, মল্লিক বাজার, বেলগাছিয়া, নিউ মার্কেট, চিৎপুর, টালিগঞ্জ, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড—এসব এলাকা ঘিরে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। এখানের সব ছোট–বড় বাজারে ঈদের আগে ভিড় লেগেই থাকে। ধনী–গরিব সবাই যে যার সাধ্যমতো কেনে ঈদের পসরা। এবার স্থানীয় লোকজন এসব বাজারে এলেও তার সংখ্যা অত্যন্ত কম।