দাম্ভিক জাতীয়তাবাদের হুমকি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান হিরোশিমার মেয়রের

জাপানের হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা একদল শিশু।ছবি : এএফপি
জাপানের হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা একদল শিশু।ছবি : এএফপি

জাপানের হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাৎসুই দাম্ভিক জাতীয়তাবাদের হুমকি প্রত্যাখ্যান করতে নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।


হিরোশিমার মেয়র বলেন, ‘১৯৪৫ সালে একটিমাত্র আণবিক বোমা যখন আমাদের শহরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, তখন গুজব শোনা যেত যে ৭৫ বছরে এখানে আর কিছুই গড়ে উঠবে না। তা সত্ত্বেও হিরোশিমা উঠে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এই শহর এমন শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে যে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন। মানবতা এখন নতুন এক হুমকির মুখোমুখি। সেটা হচ্ছে করোনাভাইরাস। তবে অতীত থেকে আমরা শিক্ষা পেয়েছি, এই হুমকিও আমরা সামাল দিতে পারব।’


মেয়র কাজুমি মাৎসুই আরও বলেন, ‘এক শতাব্দী আগে ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি যখন আঘাত হেনেছিল, লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে তা বিশ্বকে আতঙ্কের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলতে থাকায় সম্মিলিতভাবে সেই হুমকি বিশ্ব মোকাবিলা করতে পারেনি। পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদের উত্থান থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও আণবিক বোমার পথে বিশ্ব এগিয়ে যায়। অতীতের সেই বেদনার পুনরাবৃত্তি আমাদের অবশ্যই হতে দেওয়া উচিত নয়। নাগরিক সমাজের উচিত হবে দাম্ভিক জাতীয়তাবাদ ও সব রকম হুমকি প্রত্যাখ্যান করা।’


হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাৎসুইয়ের এ রকম ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আজ সকালে শেষ হয়েছে হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। করোনাভাইরাসের কারণে অতিথি ও দর্শকসংখ্যা সীমিত রাখা হয়। বোমা হামলার সময় সকাল সোয়া ৮টায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।


অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁর ভাষণে বলেছেন, প্রতিটি দেশের উচিত হবে পরষ্পরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে অবিশ্বাসের ধারণা দূর করার প্রচেষ্টা জোরদার করা। জাপানের পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষর না করা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তবে তিনি বলেন, যে শহরের লোকজন চিরায়ত শান্তির জন্য প্রার্থনা করে চলেছেন, সেই শহরে উপস্থিত হয়ে তিনি বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সবরকম চেষ্টার অঙ্গীকার করেন।

তবে হিরোশিমার মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, আণবিক বোমা হামলার শিকার দেশ হিসেবে জাপানের উচিত হবে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করা।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তাঁর সফর বাতিল হয়ে যায়। তবে অনুষ্ঠানের জন্য পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, পরমাণু ঝুঁকি থেকে বিশ্বকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের সার্বিক বিলুপ্তি।


হিরোশিমা শহরে আজ সারা দিন ধরে সরকারি ও নাগরিক পর্যায়ে নানা রকম অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকী। একাধিক অনুষ্ঠানে আণবিক বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া হিবাকুশারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরে শান্তির জন্য আবেদন জানানো অব্যাহত রেখেছেন। এবার অবশ্য করোনার কারনে অনেক অনুষ্ঠান অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।