বৈরুতের বিস্ফোরণে ক্ষোভের আগুনে ঘি

লেবানন সরকারের গাফিলতির কারণে বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে—এমন অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে লেবাননের দূতাবাসের সামনে।  ছবি: এএফপি
লেবানন সরকারের গাফিলতির কারণে বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে—এমন অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে লেবাননের দূতাবাসের সামনে। ছবি: এএফপি

লেবাননে ব্যাপক দুর্নীতি বিরুদ্ধে এবং রাজনীতিতে সংস্কার চেয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল। রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সরকারের গাফিলতির কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে দাবি করে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজপথে বিক্ষোভে নামেন শত শত মানুষ। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। নিজ দেশের জনগণের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে রয়েছে লেবাননের সরকার।

গত মঙ্গলবার লেবাননের বাণিজ্যের একমাত্র প্রাণকেন্দ্র বৈরুতের বন্দরের গুদামে বিস্ফোরণে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত ও পাঁচ হাজারের বেশি আহত হন। বছরের পর বছর অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুতই এই বিস্ফোরণের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এটা মানুষের মনে প্রবলভাবে আঘাত হানে, যা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেক লেবানিজ এটাকে সরকারের ব্যর্থতার ফসল বলছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশের গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান করতে পারেনি দেশটির সরকার। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যে পতিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণের পর বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা তারা জানাতে পারেনি। আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ১৬ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

বিস্ফোরণের পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে বৃহস্পতিবার লেবানন সফরে যান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বৈরুতের বন্দরও পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথাও বলেন। তখন অনেকে দেশের রাজনীতিতে ভয়াবহ দুর্নীতির কথা মাখোঁর কাছে তুলে ধরেন। জবাবে মাখোঁ বলেন, ‘আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ত্রাণ দুর্নীতিবাজের হাতে পড়বে না।’ লেবাননের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মাখোঁ বলেন, লেবানন একা নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটির পাশে আছে। আন্তর্জাতিক জরুরি ত্রাণসহায়তা প্রদান এবং এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার না করলে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা লেবানন ডুবতেই থাকবে। এ সময় পাশে থাকা লেবাননের নেতাদের উদ্দেশে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আগামী দিনগুলোতে লেবাননের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আপনারা কাজ করবেন, যা ব্যাপক পরিবর্তনের ঘটাতে সহায়ক হবে।

>

বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে
বিদেশি নেতারা দেশটির রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন

ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য বিশাল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দেশটির। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) লেবাননের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে গত মে মাসে। তবে বর্তমানে সেটা স্থগিত রয়েছে। আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, এই সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থবহ কর্মসূচিই পারে সংকট সমাধানে।

বাহ্যিক তহবিল হিসেবে আইএমএফের কাছে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা চাইছিল লেবানন সরকার। বিস্ফোরণের পর লেবানন আরও ভয়াবহ সংকটে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে এমনিতেই নিদারুণ কষ্টে আছেন লেবানিজরা। এর মধ্যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ অনেককে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্টের হিড়িক পড়ে যায়। বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলাকে দায়ী করেন তাঁরা।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন ও প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এই বিপর্যয়ের পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে ১৬ জন বন্দরকর্মীকে আটক করার ঘোষণা দিয়েছেন একটি সামরিক আদালত।

বৈরুত বন্দর দেশটির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বন্দরটি দিয়েই বেশির ভাগ খাদ্যশস্য আসত। সেটি ধ্বংস হওয়ায় আমদানির কাজ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ জন্য দেশটিতে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।