ভারতীয় ডুবোজাহাজে বিস্ফোরণ

মুম্বাইয়ে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে জ্বলছে আইএনএস সিন্ধুরক্ষক। দূরে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি তা দেখছেন ষ ছবি: রয়টার্স
মুম্বাইয়ে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে জ্বলছে আইএনএস সিন্ধুরক্ষক। দূরে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি তা দেখছেন ষ ছবি: রয়টার্স

ভারতের মুম্বাইয়ে নৌবাহিনীর একটি ডুবোজাহাজে (সাবমেরিন) আগুন লেগে বিস্ফোরণের পর গতকাল বুধবার তা ডুবে যায়। আইএনএস সিন্ধুরক্ষক নামের সাবমেরিনটি দুর্ঘটনার সময় ডকইয়ার্ডে ভেড়ানো ছিল। দুর্ঘটনায় জাহাজটির তিন কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন নাবিক নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁদের সবার মৃত্যুর বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত।
দুর্ঘটনাটিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে দুঃখজনক এবং বিরাট ক্ষতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। তবে তিনি মৃতের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে জানাননি। দেশের সেবা করতে গিয়ে যেসব নৌসেনা ‘প্রাণ দিয়েছেন’, তাঁদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন অ্যান্টনি।
নৌবাহিনী বলেছে, ডিজেল ও বিদ্যুতে চালিত সাবমেরিনটিতে কয়েকজন আটকা পড়েছেন। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত করা হচ্ছে। জ্বালানি, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও বিস্ফোরক গোলাবারুদ থেকে দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএনএস সিন্ধুরক্ষক দুর্ঘটনার সময় সক্রিয় দায়িত্বে ছিল না।
বিস্ফোরণকালে পাশেই ছিল আইএনএস সিন্ধুরত্ন নামের আরেকটি সাবমেরিন। সেটিও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী।
মাত্র গত সপ্তাহেই ভারতীয় নৌবাহিনীর দেশে নির্মিত প্রথম বিমানবাহী রণতরি আইএনএস বিক্রান্ত উদ্বোধন করা হয়। এই উল্লেখযোগ্য অর্জনের পর পরই সাবমেরিনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ল। কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণে সাবমেরিনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাবিকদের অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। তাঁদের মধ্যে আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত সাবমেরিনটি রাশিয়ায় নির্মিত এবং এর ওজন দুই হাজার ৩০০ টন। কয়েক মাস আগে প্রায় আট কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে রাশিয়া থেকে এর আধুনিকায়নের কাজ করিয়ে আনা হয়। সাবমেরিনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার জেভিয়োজদোশকা বলেছে, গত জানুয়ারিতে ভারতে ফেরত পাঠানোর সময় আইএনএস সিন্ধুরক্ষক সম্পূর্ণ ঠিকঠাক অবস্থায় ছিল। বিশেষজ্ঞরা যাচাই করেই সাবমেরিনটিকে চলাচলের উপযোগী বলে ঘোষণা করেছিলেন। এটি বুঝে নেওয়ার সময় ভারতীয়রা কোনো অভিযোগ করেনি।

আইএনএস সিন্ধুরক্ষক ষ  রয়টার্সের ফাইল ছবি
আইএনএস সিন্ধুরক্ষক ষ রয়টার্সের ফাইল ছবি


২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ সাবমেরিনটিতেই আগুন লেগে একজন নাবিকের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর সেটি মেরামতের জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হয়। আইএনএস সিন্ধুরক্ষক ৫৩ সদস্যের ক্রু নিয়ে সাগরতলে ৪৫ দিনের নৌযাত্রায় সক্ষম।
ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাদের সোভিয়েত যুগের সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখনো রাশিয়াই ভারতকে সবচেয়ে বেশি সামরিক অস্ত্র সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।

আইএনএস সিন্ধুরক্ষককে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সর্বাধুনিক ভারতীয় সাবমেরিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতীয় নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত হবে। ১৬ বছরের পুরোনো সাবমেরিনটির আধুনিকায়নে ইতিমধ্যে ৪৮০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। এটি ১০ বছর ঠিকমতো কাজ করবে বলে আশা করা হয়েছিল। এই সাবমেরিনটির অভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযান প্রস্তুতি ব্যাহত হবে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এখন অন্তত ২০টি সাবমেরিন প্রয়োজন হলেও আইএনএস সিন্ধুরক্ষকসহ রয়েছে মাত্র ১৪টি। গত ১৬ বছরে নৌবাহিনী নতুন কোনো সাবমেরিন পায়নি।
রাশিয়ায় ১৯৮৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় সিন্ধুরক্ষক। এটি সাগরের প্রায় ৯০০ ফুট গভীরতায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ মাইল গতিতে চলাচল করতে পারে।
ভারতীয় নৌবাহিনীতে দুর্ঘটনার হার বিমানবাহিনীর তুলনায় কম। রাশিয়ায় নির্মিত মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের বহু দুর্ঘটনায় ভারতীয় বিমানবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজগুলোর আধুনিকায়নের বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে বিলম্বিত হয়েছে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও পিটিআই।