অভিজিৎ হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা, তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব

জেন সাকি: ফাইল ছবি
জেন সাকি: ফাইল ছবি

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশ চাইলে এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে সহায়তা দিতে প্রস্তুত দেশটি। গতকাল শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র জেন সাকি এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র। এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও কাপুরুষোচিত অভিহিত করে জেন সাকি বলেন, অভিজিৎ রায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে তীব্র নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
অভিজিৎকে একজন সাংবাদিক, মানবতাবাদী, স্বামী ও বন্ধু অভিহিত করে তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান জেন সাকি। তিনি বলেন, ‘জঘন্য সহিংসতার মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে তাঁকে (অভিজিৎ) কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংরক্ষিত সর্বজনীন আদর্শ এবং বুদ্ধি ও ধর্মীয় আলোচনার স্বাধীনতার বিষয়ে দেশটির গর্ব করার মতো ঐতিহ্যের প্রতি এটা কাপুরুষোচিত আঘাত।’
এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ চাইলে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত।মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের খবর গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। মুক্তচিন্তার লেখালেখির কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে সংবাদে বলা হয়। এই সংবাদে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ কি বেড়েই চলছে—এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রবাসীদের।

অভিজিৎ হত্যার সংবাদ পাওয়ার পরই নিউইয়র্কে প্রবাসীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে জ্যাকসন হাইটসের প্রতিবাদ সমাবেশে সাধারণ প্রবাসীসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা যোগ দেন।
প্রবাসের অনেকেই বলছেন, দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ভিন্ন চিন্তা ধারণ ও প্রকাশের কারণে দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে ভাবিয়ে তুলছে। এতে নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের মধ্যে দেশবিমুখতা প্রবল হয়ে উঠতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা।
নিউইয়র্ক থেকে প্রযুক্তিবিদ ইশতেহাক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রবাসী হলেও দেশ নিয়ে সব সময় ভাবি। দেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু এখন বাংলাদেশে যাওয়া নিরাপদ ভাবছি না। আমাদের সন্তানদের স্বদেশমুখী করার বাস্তবতাটি আরও সংকুচিত হয়ে উঠছে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা গুরুতর জখম হন। তিনি এখন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত নন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
অভিজিৎ খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় কুমার রায় বাদী হয়ে গতকাল সকালে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। গতকাল বিকেলে তিনি নিজের বাসায় প্রথম আলোকে বলেন, ব্লগে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত-শিবির।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমান প্রথম আলোকে বলেন, আনসার বাংলা-৭ নামের একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে টুইট করেছে।
অভিজিৎ ও রাফিদা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। অভিজিৎ ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সম্পাদক ও লেখক। ‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে’ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাহানারা ইমাম পদক পায় মুক্তমনা। রাফিদা আহমেদ লেখালেখি করেন বন্যা আহমেদ নামে। অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, বিশ্বাসের ভাইরাস।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। আট বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী তিনি। ২০০৮ সালে তিনি রাফিদাকে বিয়ে করেন। এ বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরেন। আগামী মাসে স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা। দুই ভাইয়ের মধ্যে অভিজিৎ বড়।