সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নতুন জ্বালা আইএস

লিবিয়ায় জঙ্গি ইসলামি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২১ জন মিসরীয় নাগরিককে গলা কেটে হত্যা করেছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই কপটিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপোলির একটি সমুদ্রসৈকতে তাদের শিরশ্ছেদের পর জঙ্গিরা অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ করে।
লিবিয়ায় জঙ্গি ইসলামি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২১ জন মিসরীয় নাগরিককে গলা কেটে হত্যা করেছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই কপটিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপোলির একটি সমুদ্রসৈকতে তাদের শিরশ্ছেদের পর জঙ্গিরা অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ করে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এখন আর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতে যুদ্ধরত বিদ্রোহী ও সেনাদের মধ্যে লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন ও গোষ্ঠীর যোদ্ধারাও এখন যোগ দিয়েছে এ লড়াইয়ে। গতকাল মঙ্গলবার আল কায়েদা ও তাদের দোসররা মিলে হামলা চালিয়েছে বাশারের অনুগত সেনা নিয়ন্ত্রিত ইদলিব শহরে। এতে সেনা ও জঙ্গি মিলিয়ে ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
টানা চার বছর ধরে চলা এ যুদ্ধের যেন শেষ নেই। এরই মধ্য ঝরে গেছে লাখো প্রাণ। রক্তপাত চলছেই। এর কি কোনো শেষ নেই?
২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় শুরু হয়েছিল সরকার বিরোধী আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। তবে এই গৃহযুদ্ধে সেখানকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এখন চাপা পড়ে গেছে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বর্বর নারকীয় কর্মকাণ্ডের নিচে।

চার বছর ধরে চলা এ গৃহযুদ্ধে এখন দেশটির বিশাল অংশই জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠীটির দখলে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন আর বিপ্লবী স্বপ্ন অনেকটাই ঝাপসা।

বর্বর সব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আইএস পুরো বিশ্বের নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে গোষ্ঠীটি দুই লাখ ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা অপহৃত ব্যক্তিদের শিরশ্ছেদের ভিডিও প্রচার করেছে। আরও যেসব বর্বরোচিত কাণ্ড ঘটিয়েছে, এরমধ্যে রয়েছে ‘অবিশ্বাসী’ ও ‘চর’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা, সমকামীদের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা, লোকজনকে জিম্মি করে খাঁচায় ভরে নিয়ে যাওয়া, নারীদের দাসে পরিণত করা, জর্ডানের এক পাইলটকে পুড়িয়ে হত্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, প্রাচীন ঐতিহাসিক সব শিল্পকর্ম ধ্বংস।

প্যারিসভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনস এর গবেষক করিম বিতার বলেন, ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আইএস পশ্চিমাদের বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে তারা অনেক দূর এগিয়েছে। যার অর্থ তারাই এখন চূড়ান্ত শত্রু। অন্যরা তাদের তুলনায় তেমন কিছুই নয়।

২০১৩ সালে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি তৎপরতা সবার নজর কাড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে সিরীয় সেনাবাহিনীকে অনেকটা এড়িয়ে গেলেও পরের বছর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারা। গত জুনে সিরিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইরাকের বেশ খানিকটা অংশ দখল করে আইএস নিজেদের খিলাফত ঘোষণা করে। বর্তমানে আইএসের প্রধান লক্ষ্য—ইরাকের সুন্নি অঞ্চল ও বাশারের পতন ঘটিয়ে সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে খিলাফতের ব্যাপ্তি ঘটানো।

আইএস বিভিন্ন দেশে সংঘাতে লিপ্ত ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের আকৃষ্ট করছে। ইতিমধ্যে হাজারো ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশের তরুণেরা সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধরত আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। শুধু তরুণেরাই নন, ইদানীং বেশ কিছু তরুণীকেও আইএস আকৃষ্ট করছে।
২০১৩ সালে দামেস্কের বাইরে ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ায় সেনা অভিযানের হুমকি দিলে প্রেসিডেন্ট আসাদকে এই্ ধ্বংসযজ্ঞ থামান। পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ায় সেনা হস্তক্ষেপ করবে না-এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আসাদ ওই সব অস্ত্র হস্তান্তরে রাজি হয়েছিলেন।

এখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট আইএসকে দমনে সিরিয়ায় মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বই এখন মনে করছে, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ মিত্র হতে পারে। এরমমধ্যে একজন মার্কিন কূটনীতিক আসাদকে ‘সমস্যা সমাধানের একটি অংশ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

প্যারিসভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনস এর গবেষক করিম বিতার বলেন, ‘আরব বিপ্লবের আগে আমরা যেমনটা করেছিলাম, এখন আবারও তেমনটা ভাবছি। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ববাদ মন্দের ভালো হবে এবং আমাদের এই কর্তৃত্ববাদী সরকারই বজায় রাখতে হবে।’

সম্প্রতি পর্তুগিজ এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী আসাদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সিরিয়ার এই চলমান অবস্থার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ষড়যন্ত্র দায়ী। যদি বিদ্রোহীদের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনই থাকে, আঞ্চলিক দেশগুলোর সমর্থন থাকে, অর্থকড়ি ও অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান থাকে, তাহলে কীভাবে একটি বিপ্লব ভেস্তে যায়?

বর্তমানে সিরিয়ার এই গৃহযুদ্ধ বিভিন্ন দিক দিয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে। বাশারের সেনারা এখন একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়ছে। লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ, ইরানি সেনা এবং কুর্দি মিলিশিয়ারাও এ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে।

বিতার বলেন, সিরিয়ার বিপ্লবের প্রথম দিকে স্পষ্টভাবে দুটি পক্ষ ছিল। কিন্তু আজ সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে লড়ছে। গত বছর পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির নাটকীয় পতন ঘটে। সিরিয়ার অর্থনীতি ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ক্ষুধা ও ঠান্ডা প্রতিটি দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সেখানকার এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ফেলো ইসমাইল হোকায়েম অদূর ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতির কোনো রাজনৈতিক সমাধান দেখছেন না বলে মন্তব্য করেন।