কেনিয়াকেই কেন বেছে নিচ্ছে আল-শাবাব?

সম্প্রতি কেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৪৮ জনকে হত্যা করে সোমালিয়ার ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাব। তারা আরেকটি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ফাইল ছবি: এএফপি
সম্প্রতি কেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৪৮ জনকে হত্যা করে সোমালিয়ার ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাব। তারা আরেকটি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ফাইল ছবি: এএফপি

পুষে রাখা আক্রোশ থেকে কেনিয়ায় বার বার রক্ত ঝরাচ্ছে আল-কায়েদার দোসর আল-শাবাবের জঙ্গিরা। সম্প্রতি কেনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গারিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৪২ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১৪৮ জনকে হত্যা করে। এখানেই তারা ক্ষান্ত নয়। ‘আরেকটি রক্তগঙ্গা’ বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। 
গত বৃহস্পতিবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে সশস্ত্র জঙ্গিরা ১৪২ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১৪৮ জনকে হত্যা করে। ১৯৯৮ সালে দেশটির রাজধানী নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার পর এটাই কেনিয়ার সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞ। আল-কায়েদার ওই হামলায় ২১৩ জন নিহত হয়েছিল।
এর আগে ২০১৩ সালে দেশটির রাজধানী নাইরোবির একটি বিপণিকেন্দ্রে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল আল-শাবাব। ওই বিপণিবিতানটি চার দিন জিম্মি করে রেখেছিল তারা। শেষমেশ আল-শাবাব জঙ্গিরা ১৩টি দেশের ৬২ জন পর্যটকসহ অন্তত ৬৭ জনকে হত্যা করে।
হত্যাযজ্ঞের জন্য কেনিয়াকেই বারবার কেন বেছে নিচ্ছে আল-শাবাব? কেনিয়ার সঙ্গে তাদের শত্রুতাইবা কেন? কেন তারা এবারের হত্যাকাণ্ডে বেছে বেছে অমুসলিমকে হত্যা করল?

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল-শাবাব সোমালিয়ার ইসলামপন্থী একটি জঙ্গি সংগঠন। আল-কায়েদার সঙ্গে তারা জড়িত। সংগঠনটি সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দুর্গম গ্রামগুলোতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে। গত কয়েক দশকে খরা ও অন্যান্য কারণে অন্তত পাঁচ লাখ সোমালিয়ার নাগরিক শরণার্থী হিসেবে কেনিয়ায় আশ্রয় নেয়। আল-শাবাব জঙ্গিরা আর্থিক ও পারিপার্শ্বিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এই শরণার্থীদের মধ্যে থেকে বড় একটা অংশকে দলে ভেড়ায়। কেনিয়ার ভেতর সোমালি ও অসোমালি উভয় পক্ষ থেকে আল-শাবাবের দল ভারী হয়ে ওঠে। কেনিয়ার জন্য তারা বেশ হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে ২০১১ সালের অক্টোবরে আল-শাবাব জঙ্গিদের দমন করতে সোমালিয়ায় সেনা পাঠায় কেনিয়া। সোমালিয়ায় কেনিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ ও তাঁদের ওপর নিপীড়নমূলক আচরণ সহজভাবে নেয়নি আল-শাবাব। সুবিধাবঞ্চিত মুসলিম নাগরিকেরাই মূলত সেনাদের দমন-পীড়নের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। আল-শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর দাবি, কেনিয়ার সেনারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সোমালি অঞ্চল এবং দক্ষিণ সোমালিয়ায় ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় নৃশংসতা’ চালাচ্ছে।
কেনিয়ার সরকার যখন আল-শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এতে সমর্থন দেয় সাধারণ নাগরিকেরা। এ কারণে আল-শাবাবের জঙ্গিরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা কেনিয়ায় বড় ধরনের হামলা চালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। কেনিয়ার জঙ্গি বিরোধী অভিযানে পশ্চিমা সমর্থন রয়েছে বলে তাদের প্রতিও বিদ্বেষী হয়ে ওঠে জঙ্গিরা। পশ্চিমা শক্তিতে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য বলে অমুসলিমদের ওপর চাপা রোষ পুষছিল আল-শাবাবের জঙ্গিরা। এর মধ্যে ইসলামিক স্টেটের মদদ রয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। এসব মিলিয়েই আল-শাবাবের সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের পটভূমি।

গত বৃহস্পতিবার কেনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গারিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর দায় স্বীকার করে আল-শাবাবের মুখপাত্র শেখ আলী মাহমুদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা এবং অমুসলিমদের জিম্মি করার সঙ্গে তাঁর সংগঠনটি জড়িত। জিম্মি হওয়া ব্যক্তিরা খ্রিষ্টান বলে দাবি করে মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের লোকেরা সেখানে পৌঁছে মুসলিমদের মুক্ত করে দেয়। আমরা অন্যদের জিম্মি করে রেখেছি। আমাদের লোকেরা এখনো লড়াই করছে। লক্ষ্য হলো যারা শাবাবের বিরুদ্ধে, তাদের হত্যা করা।’

কেনিয়ার হাজার হাজার সেনা আফ্রিকান ইউনিয়নের সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদ বলেন, কেনিয়া সোমালিয়ার সঙ্গে ‘যুদ্ধরত’।

গারিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দুদিন পর কেনিয়ার নাগরিকদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে আল-শাবাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তোমাদের সরকার আমাদের মুসলিম ভাইদের হত্যা ও তাদের প্রতি অত্যাচার বন্ধ না করলে এবং কেনিয়ার সব মুসলিম অঞ্চল স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না। ওই সময় পর্যন্ত কেনিয়ার শহরগুলো রক্তে লাল হতে থাকবে। এটা হবে দীর্ঘ মেয়াদি ভয়াবহ যুদ্ধ।’