চমক দিয়ে দ্বিতীয়বার ক্যামেরন

.
.

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে জরিপ ও বিশ্লেষণের সবই ভুল প্রমাণিত হলো। সব জরিপের ফলাফলই আভাস দিয়েছিল কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে না। ফলে পার্লামেন্ট হবে ঝুলন্ত। কিন্তু বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের ভোট গণনার পর গতকাল শুক্রবার জানা গেল, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গড়তে জোটসঙ্গী খুঁজতে হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে।
এটি যুক্তরাজ্যে ৫৬তম সাধারণ নির্বাচন। পার্লামেন্টের মোট ৬৫০ আসনের মধ্যে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ৩২৬ আসন। কনজারভেটিভ দল পেয়েছে ৩৩১ আসন। ফলে এককভাবে সরকার গঠনে তাদের কোনো বাধা রইল না। বিরোধী দল লেবার পার্টি পেয়েছে ২৩২টি আসন।
ক্যামেরনের দলের অভাবনীয় এই বিজয়ে বিরোধী দলগুলোর ওপর যেন সুনামি বয়ে গেছে। পূর্ণ ফলাফল ঘোষণার আগেই ব্যর্থতার দায় নিয়ে দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) নেতা নিক ক্লেগ এবং ইউকে ইন্ডিপেনডেন্স (ইউকিপ) দলের নেতা নাইজেল ফারাজ।
ভোটে পরাজিত হয়ে আসন হারিয়েছেন লেবার দলের শ্যাডো চ্যান্সেলর এড বলস, পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র ও নির্বাচনী প্রচার দলের প্রধান ডগলাস আলেক্সান্ডার এবং দলের স্কটল্যান্ড শাখার প্রধান জিম মার্ফি। কনজারভেটিভ দলের সঙ্গে জোট বাঁধার সুবাদে গত পাঁচ বছর মন্ত্রী পদে থাকা লিবডেম নেতারা নিজ নিজ আসনে পরাজিত হয়েছেন। এই তালিকায় আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী ভিন্স ক্যাবল, জ্বালানিমন্ত্রী এড ডেভিস, ট্রেজারি-বিষয়ক চিফ সেক্রেটারি ডেনি আলেক্সান্ডার, প্রভাবশালী নেতা সায়মন হিউজেজ এবং চার্লস কেনেডি। ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজও জয়ী হতে পারেননি। ইউকিপ এবং গ্রিন পার্টি একটি করে আসন জিতেছে।
বিগত পার্লামেন্টে ২৫৮ জন এমপি ছিল লেবার পার্টির। এবার তা কমে হয়েছে ২৩২ জন। দলটি সবচেয়ে বেশি ধরাশায়ী হয়েছে স্কটল্যান্ডে। সেখানে দখলে থাকা ৪১টি আসনের মধ্যে ৪০টিই এবার হাতছাড়া হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, গত পাঁচ বছর কনজারভেটিভ দলের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকা লিবডেমের অবস্থা আরও করুণ। গত নির্বাচনে তারা ৫৬ আসনে জিতেছিল। এবার সেই সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র আট।
তবে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে এসএনপি। স্কটল্যান্ডের মোট ৫৯টি আসনের মধ্যে গতবার এই দলটি পেয়েছিল মাত্র ছয়টি। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬। বাকি তিনটি আসন ভাগ করে নিয়েছে স্কটল্যান্ডের অপর তিনটি দল।
নির্বাচনের আগের রাতে সর্বশেষ জরিপেও আভাস দেওয়া হয়েছিল যে লেবার এবং কনজারভেটিভ ২৭৩টি করে আসন জিতবে এবং জোট সরকার অনিবার্য। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ভোট নেওয়া শেষ হওয়ামাত্র বুথফেরত মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপ ওই চিত্র বদলে দেয়। বুথফেরত জরিপে প্রথমে বলা হয় কনজারভেটিভ ৩১৬ আসন জিতবে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই আভাস ৩৩৩ গিয়ে ওঠে।
একদিকে ইংলিশ জাতীয়তাবাদ-ঘেঁষা কনজারভেটিভ দলের এককভাবে সরকার গঠন, অন্যদিকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী এসএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
২০১০ সালে দলটি প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় উদারপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) দলের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছিল কনজারভেটিভ। এবার এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় রক্ষণশীল দলটি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় কল্যাণ হ্রাস এবং সরকারি কৃচ্ছ্র সাধনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তাঁর কাছে যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতা সবার আগে। তিনি সমগ্র যুক্তরাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রেখে একটি জাতি হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আর লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড নির্বাচনী ফল ঘোষণার রাতটিকে অভিহিত করেছেন ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর’ ও ‘যন্ত্রণাদায়ক’ হিসেবে।

৬৫০ আসনের পার্লামেন্ট

দলের নাম আসন
কনজারভেটিভ পার্টি ৩৩১
লেবার পার্টি ২৩২
স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫৬
লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ৮
ডেমোেক্রটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ৮
অন্যান্য ১৫