হাঁচছে বানর, হাঁটছে মাছ!

নীল রঙের এই মাছ ডাঙায় চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ছবি: এএফপি
নীল রঙের এই মাছ ডাঙায় চার দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ছবি: এএফপি

বৃষ্টি পড়ুক না, সে বানর হাঁচি দিতে দিতে দিশেহারা হয়ে যাবে। কারণ তার নাকটিই উল্টো। বৃষ্টি পড়লে ফুটো দিয়ে সোজা পানি ঢুকে যায়। আর সে মাছ? ডাঙায় ড্যাঙ ড্যাঙ হাঁটে। পাক্কা চার দিন থাকতে পারে পানি ছাড়াই। এমন সব নতুন প্রাণী আর কিছু নতুন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের একটি সংরক্ষক দল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিমালয়ের নাজুক পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দুই শতাধিক প্রজাতির নতুন প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে বলে আজ মঙ্গলবার এএফপির খবরে জানানো হয়।

ভুটান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল ও তিব্বতের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে নতুন নতুন বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান পান বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। হুমকির মুখে থাকা পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ডব্লিউডব্লিউএফ ওই বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের একটি সমন্বিত জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

নতুন আবিষ্কৃত ১০ ধরনের উভচর প্রাণীর মধ্যে রয়েছে এই ব্যাঙও। ছবি: এএফপি
নতুন আবিষ্কৃত ১০ ধরনের উভচর প্রাণীর মধ্যে রয়েছে এই ব্যাঙও। ছবি: এএফপি

জরিপের সূত্র ধরে বিজ্ঞানীদের দেওয়া ভাষ্য, তাঁরা নীল রঙের এমন মাছের সন্ধান পেয়েছেন, যে মাছ হাঁটতে পারে। এর মাথা অনেকটা সাপের মতো, এটি ডাঙায় চার দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। এটি ভেজা মাটিতে ৪০০ মিটার পর্যন্ত হড়কে যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, লাল, হলুদ ও কমলা রঙের এমন এক ‘পিট ভাইপার’ সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা রত্নতুল্য। মিঠাপানির এমন মাছের দেখা মিলেছে, যার রয়েছে ‘ড্রাকুলার’ মতো দাঁত। পাওয়া গেছে তিন ধরনের নতুন কলা।

পাওয়া গেছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের এমন এক ‘পিট ভাইপার’ সাপের সন্ধান, যা রত্নতুল্য। ছবি: এএফপি
পাওয়া গেছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের এমন এক ‘পিট ভাইপার’ সাপের সন্ধান, যা রত্নতুল্য। ছবি: এএফপি

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ২০১০ সালে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে বনে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কালো ও সাদা রঙের এক ধরনের বানর সন্ধান পেয়েছেন। এদের রয়েছে ওল্টানো চ্যাপ্টা নাক। বৃষ্টি নামলে নাকের ফুটোতে পানি ঢুকে এদের প্রচণ্ড হাঁচি শুরু হয়। এ সময় দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে থাকে ওরা।

রয়েছে রেন বাবলা নামের এই ছোট্ট পাখিও। ছবি: এএফপি
রয়েছে রেন বাবলা নামের এই ছোট্ট পাখিও। ছবি: এএফপি

ডব্লিউডব্লিউএফ বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চালানো তাদের জরিপে ২১১ ধরনের নতুন প্রজাতির বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে অর্কিডসহ ১৩৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৬ প্রজাতির মাছ, ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৩৯ প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি করে নতুন প্রজাতি পাওয়া গেছে।

জরিপ প্রতিবেদনে ডব্লিউডব্লিউএফ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বৃক্ষনিধন, মানুষের অবাধ বিচরণ, চোরা শিকার, খনিজসম্পদ আহরণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়নসহ বিভিন্ন কারণে এসব নতুন প্রজাতির প্রাণী হুমকির মুখে বলে সতর্ক করেছে।