সিঙ্গুরের জমি কৃষককে ফিরিয়ে দিয়ে টাটাকে বিনিয়োগের আহ্বান মমতার

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বিতর্কিত সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফেরত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী টাটাকে ওই রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার জন্য সাবেক বামফ্রন্ট সরকার ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। আজ বুধবার বিকেলে সেই সিঙ্গুরে এক অনুষ্ঠানে কৃষকদের হাতে জমি ফিরিয়ে দিলেন মমতা। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণের পর ৪০০ একর জমির অনিচ্ছুক কৃষকেরা তাঁদের জমি টাটাকে দিতে আপত্তি তুলে সরকারের ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করেননি। এই অনিচ্ছুক কৃষকদের নিয়ে পরে মমতার নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে রাজ্যে। এই আন্দোলনের জেরে টাটা পরে গুজরাটের সানন্দে গিয়ে এই কারখানা গড়ে তোলে।
এই সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে পরাস্ত করে প্রথম ক্ষমতায় আসেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে টাটার সঙ্গে মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। হাইকোর্টে টাটা জিতলে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। গত ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়ে দেন, ২০০৬ সালের জমি অধিগ্রহণ ছিল অবৈধ। সুপ্রিম কোর্ট ওই ৯৯৭ একর জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। বলা হয়, ১০ সপ্তাহের মধ্যে ওই জমি ফিরিয়ে দিতে হবে কৃষকদের। আর যেসব কৃষক সেদিন ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি, তাঁদেরও দিতে হবে ক্ষতিপূরণ।
এরপর মমতা ঘোষণা দেন ১০ বছর লড়াইয়ের পর এই জয় পালিত হবে ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর বিজয় দিবস হিসেবে। আজ সেই সিঙ্গুর দিবসে যোগ দিয়ে মমতা ওই ৯৯৭ একর জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেন। কৃষকদের হাতে তুলে দেন ৯ হাজার ১১৭টি জমির পরচা। যাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি, তাঁদের হাতে ৮০৬টি চেকও তুলে দেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সিঙ্গুরের মঞ্চ থেকে টাটাকে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ডাক দেন। বলেন, ‘আমরা এক মাস সময় দিলাম, আপনারা ভাবুন। এখানে শিল্প গড়ুন। আমাদের গোয়ালতোড়ে এক হাজার একর জমি আছে। জমি আছে পানাগড় ও হাওড়ায়। আপনারা পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে শুরু করুন।’ মমতা এ দিন ঘোষণা দেন, জোর করে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। প্রয়োজনে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনে নেব তাঁর সরকার।