সেলফিতে বিপদ

সেলফি তোলার সময় সতর্ক থাকুন, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। ছবি: অধুনা
সেলফি তোলার সময় সতর্ক থাকুন, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। ছবি: অধুনা

সংবাদটি যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আপনার মনে দাগ কাটার কথা। ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার পর ভারতের কলকাতায় এক দুর্ঘটনা ঘটে। একেক সংবাদমাধ্যমে একেকভাবে সংবাদটি উপস্থাপন করলেও বিষয়বস্তু হচ্ছে এই—ধীরগতিতে চলা ট্রেনের গেটে সেলফি তুলতে গিয়ে এক যুবকের হাত থেকে পড়ে যায় তাঁর দামি মোবাইল। আর সেটি খুঁজতে ট্রেন থেকে লাফ দেয় ওই যুবক। তাতে আহত হন তিনি।

যাত্রীদের কাছ থেকে এ ঘটনা শুনে ট্রেনে থাকা তাঁর চার সঙ্গী বন্ধুকে খুঁজতে নেমে পড়েন পরের স্টেশনে। আর ছুটতে থাকেন ঘটনাস্থলের দিকে। এ সময় দুই দিক থেকেই ট্রেন আসছিল। তাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তাঁরা। এরপরই ঘটে সেই দুর্ঘটনা। তিন যুবক প্রাণ হারান। বাকি একজন আহত হন। পরে তিনিও হাসপাতালে মারা যান। এই সংবাদ যখন ১৪ এপ্রিল পাঠকেরা পড়ছিলেন, ঠিক তখনই এই দেশেও সেলফি তুলতে গিয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পাড়ে সেলফি তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় দুই স্কুলছাত্রের।

এমন নয় যে সেলফি তুলতে গিয়ে ভারতে কিংবা এ দেশে এটিই প্রথম কোনো দুর্ঘটনা। বরং পুরো বিশ্বেই সেলফি তুলতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনার হার বাড়ছে দিন দিন। আপনার হয়তো মনে আছে, কয়েক মাস আগে কক্সবাজারে জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন তারকা খেলোয়াড়কে নামিয়ে দিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এর কারণ হেলিকপ্টারের একজন যাত্রী দরজা খুলে সেলফি তুলছিলেন। এ ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল সে সময়।

আলোকচিত্রী আক্কাস মাহমুদ সেলফি তোলার ব্যাপারে বলছিলেন, ‘প্রথমত সেলফি মূল ফটোগ্রাফির পরিপন্থী। এতে চেহারা বিকৃত হয়। এ জন্য যাঁরা ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাঁদের সেলফি তোলার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি; বরং একটু কষ্ট করে কাউকে দিয়ে ছবি তুলে নিলে ভালো হয়। আগেও যে নিজের বা নিজেদের ছবি তোলা যেত না তা কিন্তু নয়। তখন সেলফ শাটার দিয়ে ছবি তোলা হতো। এতে চেহারা বিকৃত হওয়ার কোনো শঙ্কাও ছিল না।’

আর যদি সেলফি তুলতেই হয়, সে ক্ষেত্রে আক্কাস মাহমুদের পরামর্শ, বাইরে সেলফি তোলার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। রাস্তায়, গাড়িতে, ট্রেনের দরজায় কিংবা লঞ্চ—এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কখনো সেলফি তোলা যাবে না।

শুধু যে দুর্ঘটনা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বেশ পরিবর্তন এসেছে মানুষের চালচলনে/অভ্যাসে। আশপাশে অনেককে দেখা যায়, কাজের মুহূর্তে কিংবা কাজ না থাকলেও অবসরে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। আর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। এমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী সিয়েনা (ছদ্মনাম)। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন তিনি সেলফি তোলেন? তাঁর জবাব ছিল, ‘সেলফি তুলতে আমার ভালো লাগে। বর্তমানে এর ভালো চল রয়েছে।’

এ ব্যাপারে আক্কাস মাহমুদ বলেন, এটি ঠিক যে সেলফি তোলা এখন প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে অনেকে আবার নিজেকে জাহির করতে চান। যাঁদের এমন অভ্যাস, মানসিকতা আছে তা পরিহার করা দরকার।

নিরাপদে সেলফি তোলার ব্যাপারে যুক্তরাজে৵র দ্য টেলিগ্রাফ-এর একটি নিবন্ধে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তা উল্লেখ করা হলো এখানে:

* স্থির অবস্থায় সেলফি তুলুন। অবশ্য সেলফি তোলা ও স্থির স্থান নির্বাচনে নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করা উচিত।

* বন্দুক নিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় কখনো সেলফি তুলবেন না।

* বিপজ্জনক কোনো প্রাণীর সঙ্গে কিংবা এর কাছাকাছি অবস্থানে সেলফি না তোলা।

* ভারী যন্ত্রপাতি বহন করার সময় সেলফি তুলবেন না।

* বিদ্যুৎবাহী কোনো গেট বা তোরণের ওপর এবং ট্রেনে সেলফি তোলা পরিহার করতে হবে।

* ধরুন, আপনি এমন কোনো মুহূর্তে আছেন, যেখানে আপনাকে সতর্ক কিংবা মনোযোগ দিতে হচ্ছে; এ সময় সেলফি তোলা উচিত নয়।