নতুন পরিবেশে হীনম্মন্যতা!

নতুন পরিবেশে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। ছবি: অধুনা
নতুন পরিবেশে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। ছবি: অধুনা

নতুন একটি স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পথচলা শুরু হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। নতুন এই অধ্যায়ে পথচলাটা সবার জন্য সমান হয় না। এখানে জড়ো হন হাজারো মেধাবী মুখ এবং প্রত্যেকেরই থাকে ভিন্ন জীবনচরিত। কেউ হয়তো মফস্বল অঞ্চল থেকে পাড়ি জমান রাজধানীর নতুন পরিবেশে। অপর একজন হয়তো পাড়ি দেন অন্য শহরের কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী ভিন্ন এই পরিবেশ, সহপাঠীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে তার মধ্যে দেখা দেয় হীনম্মন্যতা, যার অপর নাম ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’।

কেন এই হীনম্মন্যতা

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, এটা কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই থাকে। একেকজন হয়তো একেক পরিবেশে এর সম্মুখীন হয়। আসলে একজন ব্যক্তি যখন কোনো পরিবেশের অধিকাংশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না, তখন তিনি একা হয়ে পড়েন। যাকে বলা যায় সংখ্যালঘিষ্ঠ। তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি অধিকাংশের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবেন। কেননা তিনি ধরে নেবেন, বাকিদের মতো হতে পারছেন না এবং সব সময় একধরনের আত্মগ্লানিতে ভুগবেন।

আর এটি হয়ে থাকে মূলত ভিন্ন সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, বিভিন্ন জনের ভিন্ন মানসিকতার কারণে।

বিশ্ববিদ্যালয় আসলে এমন একটি বিদ্যাপীঠ, যেখানে সমাগম হয় বিভিন্ন পরিবেশের শিক্ষার্থীর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় থাকে মফস্বলের মেধাবী মুখ। আজকাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন একটি পরিবেশে এসে হুট করেই মানিয়ে নিতে পারেন না।

মেখলা সরকার বলেন, শুধু মফস্বল বা গ্রামের একজন ছাত্রই নন, বরং একজন শহরের ছাত্র যদি তাঁর চেয়ে ভিন্ন কোনো পরিবেশে পড়তে যান, তাঁর ক্ষেত্রেও এই হীনম্মন্যতা বোধটি কাজ করবে। কেননা তিনি তো এমন পরিবেশে অভ্যস্ত নন।

শহর কিংবা গ্রাম নয়, যেসব শিক্ষার্থী দেশের আঙিনা থেকে বিদেশে পাড়ি জমান, তাঁরাও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

আরও িকছু

ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের আরও কারণ রয়েছে। যেমন অন্যরা কী ভাবছেন বা কী বলবেন, একে যদি বেশি গুরুত্ব দেন, তবে হীনম্মন্যতা আপনাকেও গ্রাস করবে। সব সময়ই সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা। নিজের ব্যর্থতা মেনে নিতে না পারা।

হীনম্মন্যতা কখনোই ভালো নয়

·আপনি যখন সারাক্ষণই আত্মগ্লানিতে ভুগবেন, তখন কোনো কাজই সফলভাবে করতে পারবেন না। কেননা কাজটি করার সময় আপনি তখন হয়তো চিন্তা করছিলেন অন্যদের কথা, আচ্ছা, এমনটি করলে বাকিরা কী ভাববে? মেখলা সরকার মনে করেন, এতে ব্যক্তির কর্মোদ্যম একেবারেই কমে যায়। ভীতি নিয়ে তো কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। তখন মস্তিষ্কও ঠিকমতো চিন্তা করতে পারে না।

একটা সময় অতিরিক্ত হীনম্মন্যতার কারণে ব্যক্তি খুব বিষণ্ন হয়ে পড়েন। অনেকে আবার তাঁর নির্দিষ্ট কাজটিকেই ঝামেলা হিসেবে মনে করতে থাকেন। ফলে মানসিক চাপের কারণে দেখা যায় ছাত্রটি আর পরীক্ষার হলেই বসতে চাইছেন না।

নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ফলে একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা, ভিন্ন কিছু গ্রহণ করার মানসিকতা নষ্ট হয়ে পড়ে। বিপরীতে অতিরিক্ত আবদ্ধ কিংবা খিটখিটে মেজাজ, কারও সঙ্গে মিশতে না পারার সমস্যা দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের জন্য অনেক সময় নানা ফোবিয়াও দেখা দেয়।

কাটিয়ে উঠুন হীনম্মন্যতা

মেখলা সরকার বেশ কিছু পরামর্শের কথা উল্লেখ করেছেন, যা একজন ছাত্র হিসেবে আপনি সহজেই অনুসরণ করতে পারেন—

·নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন

হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাস হঠাৎ করেই বাড়িয়ে তোলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যাকে বলা হয় ‘ইন্ট্রাপারসোনাল কমিউনিকেশন’। নিজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন। আপনি বাকিদের সঙ্গে মিশতে পারছেন না? সমস্যা নেই। কেননা আপনি নিজেই নিজের মতো। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে দেখুন। হয়তো আপনার কিছু গুণ আছে, যা বাকিদের নেই।

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে...’ বাক্যটি সত্য, কিন্তু তাই বলে মানুষ সব সময়েই একা চলতে পারে না। তাই চেষ্টা করুন বাকিদের সঙ্গেও চলতে। এর ফলে অনেক কিছু আপনি জানতে ও বুঝতে পারবেন। হ্যাঁ, আপনি প্রথমেই পারছেন না। কিন্তু একটা সময় পর আপনিও পারবেন।

একই সঙ্গে নিজের দুর্বলতাগুলোও কাটিয়ে উঠুন। আপনি যতক্ষণ না নিজ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছেন, ততক্ষণ আপনি নিজেকেই আবদ্ধ করে রাখছেন।

সব সময় সফল হতেই হবে এমন চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। সাফল্য কিংবা বিফলতা মিলিয়েই আপনার জীবন। যদি আপনি ভুল না-ই করেন, তবে অনেক কিছুই আপনি শিখবেন না।

নতুন কিছু গ্রহণ করে নেওয়ার মানসিকতা রাখুন। এমনও দেখা যায়, যে দলের সবাই শহরের কিংবা মফস্বলের। তারপরেও তাদের মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য চেষ্টা করুন অন্যের চিন্তাধারাকে সম্মান করতে।

এমন কারও সঙ্গে মিশুন, যে আপনার সমস্যাগুলো বুঝবে এবং যার সঙ্গে আপনি সহজেই আলোচনা করতে পারেন।

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সেলিং ব্যবস্থা থাকে। চাইলে আপনি কাউন্সেলিং করতে পারেন।

নিজেকে গুটিয়ে না রেখে মেলে ধরার সময় যে এই তারুণ্যেই!