হার্ট সুস্থ রাখতে কতটা ঘুম দরকার?

সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান বর্জন করলেই কি হার্ট অ্যাটাককে ঠেকানো যাবে? গবেষকেরা বলছেন, বর্তমানে মানুষের ঘুমের সময় কমে আসছে। কাজের চাপ, টেলিভিশন, কম্পিউটার আর মুঠোফোন মানুষের ঘুমের সময় গড়ে দিনে তিন ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার ওপর। ফলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি (৬ ঘণ্টার কম ঘুম)। আবার অতিরিক্ত ঘুমও (৯ ঘণ্টার ওপর) ঝুঁকি বাড়ায়।

গবেষকেরা বলছেন, ঘুমের মধ্যে আমাদের হৃৎস্পন্দন, রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা ও হৃদ্‌যন্ত্র, মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ডে নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। ঘুমের সময়টাতে আপনি জেগে থাকলে তাতে ছন্দপতন ঘটে। দেহঘড়ির কাজ ব্যাহত হয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে রক্তসংবহনতন্ত্রের ওপর। আদিকাল থেকে সূর্যাস্তের পর রাত নামলে মানুষের ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস। এটাই স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এ কারণেই সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সুস্থ হার্ট পেতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি জোর দিয়ে রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের কথা বলেছে।

রাত জাগা, দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস, ঘুমের সময় নানা ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও ডিভাইস ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। অফিসের কাজ বাড়িতে বয়ে আনবেন না, রাতে ফাইল বা কম্পিউটারে অফিসের কাজ করবেন না। শোবার ঘরে তো নয়ই। শোবার ঘরকে কেবল ঘুমের জন্যই ব্যবহার করবেন। ঘুমানোর আগে মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে এমন কাজ (যেমন টিভি দেখা, ফেসবুক ব্যবহার ইত্যাদি) করবেন না।

রাতে বারবার ঘুম বিঘ্নিত হলে স্লিপ এপনিয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, হৃৎস্পন্দনে অনিয়ম ইত্যাদি আছে কি না পরীক্ষা করুন। ঘুমের চক্র ঠিক রাখতে প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাবেন, একই সময় উঠবেন। সন্ধ্যার পর চা, কফি, অ্যালকোহল পান করবেন না। রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে শেষ করবেন। বিকেলবেলা একটু ব্যায়াম ঘুমে প্রশান্তি আনে। খাবারদাবার আর শারীরিক শ্রমের মতো ঘুমও সুস্থ থাকার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—এটা বিশ্বাস করতে শিখুন।

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল