সাফা রাঁধবেন চিংড়ি বিরিয়ানি

ঈদে একটু অন্য রকম রান্না করবেন সাফা কবির। ছবি: খালেদ সরকার
ঈদে একটু অন্য রকম রান্না করবেন সাফা কবির। ছবি: খালেদ সরকার
রান্না করতে বেশ পছন্দ করেন। ঈদেও রান্না করেন কিন্তু সেটা ঈদের আগের দিন। জানালেন মডেল ও অভিনেত্রী সাফা কবির। ঈদের দিনের পোলাও মাংসের রান্নাটা সামলান সাফার মা-ই। আবার ঈদের পরের দিনের রান্নাও সাফা করেন। ঈদের আগের দিন মিষ্টিজাতীয় নানা কিছু বানিয়ে রাখেন। চেষ্টা করেন ভিন্ন কিছু বানাতে। সাফা বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি একই খাবার ভিন্নভাবে ভিন্ন স্বাদে রান্না করার। তাই আমি পোলাও, বিরিয়ানি বা কাচ্চির ধারা বজায় রেখেই এবারের ঈদে রাঁধব চিংড়ি বিরিয়ানি। চিকেন রোস্ট কিন্তু নাগা ফ্লেভার স্বাদে। টুনা কাবাব, মাছের কোনো পদ রাখতে চেষ্টা করব। কারণ, মাছ আমার প্রিয় খাবার। ভেটকির পাতুরি, স্মোকড বিফ ভুনা আর সব শেষে থাকবে মিষ্টান্ন। আমার মা যখন থেকে আমাকে রান্নাঘরে ঢোকার অনুমতি দিলেন, তখন থেকে আমি প্রায়ই কিছু না কিছু বানাতাম। স্যান্ডউইচ, মিটবল, নুডলস, ফ্রাইড রাইস—এগুলো আমার প্রিয় টিফিন, নিজেই বানাতাম। এভাবেই রান্নায় হাতেখড়ি। নিজে নিজেই শিখে ফেলেছি। আসলে আমি খেতে খুব ভালোবাসি। যেকোনো খাবারই খুব তৃপ্তি নিয়ে খাই। ফলে খাবারের গন্ধটা ভালোমতো বুঝি। এখন রান্না করার থেকেও প্রিয় মানুষকে খাওয়াতেই বেশি পছন্দ করি।
চিংড়ির বিরিয়ানি
চিংড়ির বিরিয়ানি


চিংড়ির বিরিয়ানি

উপকরণ: আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন ১ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ১টি, নারকেলের দুধ ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, গুঁড়া মরিচ ১ টেবিল চামচ, দারুচিনি ৪-৫ টুকরো, এলাচি, লং, দারুচিনি একসঙ্গে গুঁড়া করে আধা চা-চামচ, ১ চা-চামচ গুঁড়া দুধ, ৫-৬ টি কাঁচা মরিচ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: প্রথমে চিংড়িগুলো একটু হলুদ, মরিচ, লবণ দিয়ে মেখে নিতে ভালোমতো ভেজে তুলে রাখতে হবে। এবার আধা কাপ তেলে আধা কাপ পেঁয়াজ ভেজে নিয়ে তাতে দুটো দারুচিনি, দুটো এলাচি, তেজপাতা দিন। আরও খানিকটা ভেজে তাতে আধা টেবিল চামচ সর্ষের তেল দিতে হবে রান্নায় ঘ্রাণ আনার জন্য। এরপর একে একে রসুন, আদা, কাঁচা জিরা বাটা আধা টেবিল চামচ, ধনে পাতা বাটা ১ টেবিল চামচ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নেবার পর ১ কাপ নারকেলের দুধ ও ১ চা-চামচ গুঁড়া দুধ দিয়ে নাড়তে হবে। শাহি রান্নার ঘ্রাণ বের হলে তখন মরিচের গুঁড়া দিন। লাল রং চলে আসবে। রান্নায় তখন চিংড়িগুলো মসলায় দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তুলে রাখতে হবে।

এবার দুই কাপ বাসমতী চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিতে হবে বাদামি হওয়া পর্যন্ত। ওখানে দুটো তেজপাতা, একটা এলাচি, দুটো দারুচিনি, পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, লবণ ও আদা বাটা দিয়ে নাড়তে হবে। এবার চালটা িদন। চালে পানি দেওয়ার আগে ভালো করে ভাজা হলে পাত্রে লেগে যাবে না। ভাজা হলে ১ কাপ দুধ, ৪ কাপ পানি দিতে হবে। পানিটা শুকিয়ে আসার আগেই চিংড়িগুলো দিয়ে দিতে হবে এবং ৩ টেবিল চামচ ঘি ছড়িয়ে দিয়ে রান্নাটা নামিয়ে নিন।

ভেটকি মাছের পাতুরি
ভেটকি মাছের পাতুরি

ভেটকি মাছের পাতুরি

উপকরণ: ভেটকি মাছ ৮ টুকরা, সরিষা বাটা ৬ টেবিল চামচ, টকদই আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৮টা, আদা বাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা আধা চা-চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, সরিষা তেল ২ টেবিল চামচ ও কলাপাতা।

প্রণালি: প্রথমে আট টুকরো ভেটকি মাছ নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। কেটে নিয়ে মাছের গায়ে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে তেলের ওপর হালকা করে ভেজে নিন। তারপর টকদই, সর্ষে বাটা, ধনে, জিরা, সর্ষের তেল নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মাছের আকার অনুযায়ী কলাপাতা কেটে নিয়ে তাওয়ায় হালকা করে সেঁকে নিতে হবে। এতে করে মাছ মোড়াতে গেলে কলাপাতা ছিঁড়ে যাবে না। কলাপাতায় এক টুকরো মাছ দিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ মসলার পেস্ট আর একটা কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। মুড়িয়ে সুতা দিয়ে ভালো করে বেঁধে নিতে হবে। তাওয়ায় তেল গরম করে তাতে কলাপাতায় মোড়ানো ভেটকির টুকরোগুলো একেক করে ভাজতে হবে। ভাজার সময় দারুণ একটা গন্ধ ছড়ালে বুঝতে হবে, ভেটকির পাতুরি রান্না হয়ে গেছে।

ফ্রুট কাস্টার্ড
ফ্রুট কাস্টার্ড

ফ্রুট কাস্টার্ড

উপকরণ: দুধ ১ লিটার, ডিমের কুসুম ২টা, ভ্যানিলা এসেন্স ১ চা-চামচ, চিনি স্বাদ অনুযায়ী, কাস্টার্ড পাউডার ২ টেবিল চামচ; কলা, লাল আঙুর, আম, বেরি ইত্যাদি পরিমাণমতো।

প্রণালি: প্রথমে চিনি ও ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে এক লিটার দুধ জ্বাল দিন। আধা লিটার বানিয়ে ঠান্ডা করে নিন। কাস্টার্ড পাউডার হালকা গরম পানিতে গুলিয়ে নিন। ডিমের কুসুম দুইটি গুলানো কাস্টার্ড পাউডারে দিন। ফল ছাড়া এবার সবকিছু একসঙ্গে এগ বিটার দিয়ে বিট করে নিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। জ্বাল দিয়ে আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে নিতে হবে। জেলো তৈরি করুন। জেলো, পানি, চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে করে ১ ঘণ্টার মতো ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এক ঘণ্টা পর ফ্রিজ থেকে বের করে কেটে কাস্টার্ডে মিশিয়ে গ্লাসে ঢেলে দিন। পছন্দসই ফল টুকরো করে কেটে দিলেই হয়ে যাবে ফ্রুট কাস্টার্ড।

নাগা চিকেন টোস্ট
নাগা চিকেন টোস্ট

নাগা চিকেন টোস্ট

উপকরণ: মুরগি ৮ টুকরা, টকদই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, রসুন বাটা দেড় চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৬-৭ টি, বাদাম বাটা ৩ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া সিকি চা-চামচ, জায়ফল সিকি চা-চামচ, জয়ত্রী সিকি চা-চামচ, এলাচি ৪টা, দারুচিনি ৩-৪ টুকরা, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ চা-চামচ, ঘি ১ কাপ, মাওয়া ১ কাপ, লেবুর রস ১ চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ, দুধ ১ কাপ।

প্রণালি: প্রথমে রোস্ট করার জন্য টক দই, মরিচের গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ ঘি, টমেটো সস এবং সামান্য লবণ নিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। আলাদা করে রাখা মুরগির টুকরাগুলো ভালোমতো মাখিয়ে নিন। প্লাস্টিকে মুড়িয়ে এক ঘণ্টার মতো রেখে দিতে হবে। এক ঘণ্টা পরে মসলা মাখা মাংসের টুকরাগুলো গরম কড়াইয়ে একটু বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন। এবারে অন্য একটি পাত্রে তেল এবং ২ টেবিল চামচ ঘি, পেঁয়াজ বাটা, ৩-৪ টুকরা দারুচিনি, ৩টা এলাচি দিয়ে ভালোমতো নেড়ে নিয়ে লবণ ছিটিয়ে জয়ত্রী, জায়ফল দিয়ে মাংসটা ভাজা ভাজা করে ফেলুন। হয়ে এলে আদা বাটা, রসুন, বাদাম ও টকদই দিয়ে নাড়তে হবে। মসলাগুলোকে আরও খানিকটা ভেজে নিন। গোলমরিচ, জিরা, ধনে গুঁড়া দিয়ে ফের নাড়ুন। মসলার তেল ওপরে উঠে এলে দুধ, ১ চা-চামচ চিনি দিতে হবে। আরও খানিকটা সময় মসলা নেড়ে তাতে তুলে রাখা মাংসের টুকরা ঢেলে দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। রান্নাটা হয়ে এলে তিনটা নাগা মরিচ দিয়ে তার ওপর বেরেস্তা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

স্মোকড বিফ ভুনা
স্মোকড বিফ ভুনা

স্মোকড বিফ ভুনা

উপকরণ: পানি ঝরানো গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ, রসুন বাটা দেড় টেবিল চামচ, আদা কুচি মাঝারি আকারের ১টি, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, তেজপাতা ২টা, এলাচি ২টা, দারুচিনি ৪টা, লবঙ্গ ২টা একসঙ্গে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন, ধনে বাটা ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়ো আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টা, সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো পরিমাণমতো ও কাঁচা মরিচ ৫টা।

প্রণালি: সব উপকরণ মিশিয়ে পুরো মাংসটা ভালো করে মাখিয়ে ফ্রিজে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এতে সব মসলা মাংসের ভেতর ঢুকবে। এবার অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে ১ কাপ পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে নিয়ে তাতে মসলা মাখানো মাংসটা ছেড়ে দিন। ভাজতে ভাজতে মাংসটা কষে এলে পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাংসটা সেদ্ধ হয়ে আসার পর কাঁচা মরিচ দিতে হবে। এবারে মাংসটা স্মোকড করার পালা। চুলায় কয়লা পুড়িয়ে নিয়ে ফয়েল পেপারে পেঁচিয়ে সেটি ছোট ছোট ছিদ্র করে নিতে হবে। মাংসটা প্রায় হয়ে এলে কয়লা প্যাঁচানো তিনটি ফয়েল পেপার মাংসের ওপর ছেড়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে
দিন। ঢাকনার ভেতর ভাপে ভাপে হয়ে যাবে স্মোকড বিফ ভুনা।

টুনা মাছের কাবাব
টুনা মাছের কাবাব

টুনা মাছের কাবাব

উপকরণ: টুনা মাছের ক্যান একটা, ফেটানো ডিম ১টা, সেদ্ধ করা আলু আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচের কম, জিরা বাটা আধা চা-চামচের কম (কেউ চাইলে ধনে পাতার কুচিও দিতে পারেন), কাঁচা মরিচ কুচি ৪/৫টা, সস স্বাদমতো।

প্রণালি: সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিন। হাতের তালুতে নিয়ে গোল আকার করে নিন। এবার আটায় গড়িয়ে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে নিতে হবে। গরম তেলে ভেজে নিলেই হয়ে যাবে টুনা মাছের কাবাব।