সিলেটের পাঁচ পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের ভিড়
জাফলং বা বিছনাকান্দিতে পাথরের মাঝ দিয়ে ছলাৎ ছলাৎ পানির আওয়াজ। পাহাড়ের বুক চিরে গড়িয়ে নামা ঠান্ডা পানি। লালা খালের স্বচ্ছ পানিতে নৌকাভ্রমণ। বাংলাদেশের একমাত্র ‘সোয়াম্প ফরেস্ট’ রাতারগুল জলারবনে পানির মধ্যে ভেসে ওঠা অরণ্য দেখতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো। উঁচু পাহাড়ে ভারত থেকে নেমে আসা মায়াবী ঝরনার পানি। এসব স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই সিলেটে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা।
ঈদের ছুটিতে সিলেট বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই সপরিবারে ছুটে এসেছেন। গতকাল বুধবার ঈদের দিনে তেমন ভিড় না থাকলেও আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকদের পদচারণ বাড়ছে। তবে পর্যটকদের উপস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ভাঙাচোরা সড়ক। তবু সড়কপথের বাধা কাটিয়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ছুটছেন পর্যটকেরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলং, মায়াবী ঝরনা পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে পর্যটনকেন্দ্রেগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সার্বক্ষণিক উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চালু করা হয়েছে পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র। তিনি বলেন, ঈদের দিন পর্যটকদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ছে।
জাফলং ও মায়াবতী ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল মান্নান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাফলংয়ে আগেও এসেছি, কিন্তু মায়াবী ঝরনা দেখিনি। নতুন আবিষ্কৃত এই পর্যটন স্পট দেখতে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাচ্ছি। স্পটটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, সিলেট থেকে স্পটে আসার সময় সড়কের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে মায়াবী ঝরনার মায়ায় এখন আর সে ভোগান্তি খারাপ মনে হচ্ছে না।
আবদুল মান্নানের মতো আরও অনেক পর্যটক জাফলং ও মায়াবী ঝরনা ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন। ঝরনার পাশাপাশি পিয়াইন নদের ঠান্ডা পানি উপভোগ করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জাফলং, খাসিপুঞ্জি, তামাবিল পয়েন্ট ও শ্রীপুর পর্যটনকেন্দ্রও দেখছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার থেকে। তবে সাধারণত ঈদের পরদিন থেকে পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় শুরু হয়। তৃতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। ঈদের তৃতীয় দিন শুক্রবার ও চতুর্থ দিন শনিবার বন্ধ থাকায় ভিড় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে ‘পাথরের বিছানা’ খ্যাত বিছনাকান্দিতেও। এখানে হয়েছে মেঘ-পাহাড়ের মিতালি। সুউচ্চ পাহাড় পাহাড় থেকে ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে নেমে আসা শীতল পানি। পাথর বিছানো শীতল পানিতে শুয়ে গা ভিজিয়ে নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজির হচ্ছেন পর্যটকেরা। হাদারপার এলাকার ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ বলেন, আজ সকাল থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে পর্যটকেরা বিছনাকান্দি যেতে ভিড় জমাচ্ছেন।
ঈদের ছুটিতে পরিবারসমেত বিছনাকান্দিতে ঘুরতে এসেছেন রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম। বলেন, ‘আজ সকালে সবাইকে নিয়ে প্রথমে রাতারগুল, পরে বিছনাকান্দি এসেছি। সিলেট শহর থেকে স্পটগুলোয় যেতে ভাঙা সড়কের জন্য ভোগান্তি হয়েছে। সড়ক মেরামত করা হয়ে গেলে মনে হয় এখানে আরও পর্যটক আসবে।’
সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার গোল্ডেন সিটি হোটেলের ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত বলেন, ‘পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা কম। মূলত, সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রিক রাস্তাগুলো বেহাল থাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি কমেছে বলে আমার ধারণা।’ তিনি বলেন, হোটেলের কয়েকটি কক্ষ এখনো ফাঁকা রয়েছে। তবে আগামীকাল কিংবা পরশুর ভেতর পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সন্দীপ কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মূল আকর্ষণ গোয়াইনঘাটের মায়াবী ঝরনা, জাফলং, রাতারগুল ও বিছনাকান্দি জৈন্তাপুরের লালাখালে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়। সেসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রিক এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।