রান্নাঘরে গিয়ে যা করবেন না

অগোছালো রান্নাঘরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ছবি: সংগৃহীত
অগোছালো রান্নাঘরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ছবি: সংগৃহীত

কেউ পূর্ণাঙ্গ নিখুঁত নয় বলে কিছু বাজে অভ্যাস থেকেই যায়। কিন্তু কিছু বাজে অভ্যাস বাদ দিতে পারলে নিজে ভালো থাকা যায়। অনেকেই রান্নাঘর অগোছালো করে রাখেন। কিন্তু গোছালো আর পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর মানেই বাড়তি কিছু সুবিধা—এ কথা গৃহিণী মাত্রই মানেন। গোছালো রান্নাঘরে হাতের কাছে চটজলদি কোনো জিনিস যেমন খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি রান্নাও হয় নির্বিঘ্নে।

এর মধ্যেও রান্নাঘরের কিছু বাজে অভ্যাস দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন অনেকেই রান্নাঘরে পানি ছেড়ে রাখেন বা রান্না না থাকলেও চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। এ ধরনের বাজে অভ্যাসে নানা ক্ষতি হতে পারে। বাদ দেওয়ার তালিকায় রাখতে পারেন—এমন কয়েকটি বাজে অভ্যাসের কথা জেনে নিন:

১. সিঙ্ক বেয়ে পানি পড়া
অনেকেই রান্না ঘরে পানির ট্যাপ ঠিকমতো বন্ধ করেন না। আবার সিঙ্কের নিচে থাকা পাইপেও ফুটো থাকতে পারে, যা দিয়ে চুঁইয়ে পানি পড়তে পারে। রান্নাঘর যাতে স্যাঁতসেঁতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে রান্নাঘরে তেলাপোকার বাসা বাঁধতে সুবিধা হয়। এতে নানা রকম রোগ ছড়ায়। খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ডায়রিয়ার সমস্যার জন্য এ অভ্যাস দায়ী। পানি ছাড়া এক সপ্তাহের বেশি টেকে না তেলাপোকা। তাই রান্নাঘরে কোথায় পানি পড়ছে, তা দ্রুত সারিয়ে নিন। ট্যাপ ঠিকমতো বন্ধ করুন।

২. চোখের সামনে অস্বাস্থ্যকর খাবার
যখনই খিদে পায়, অনেকে রান্নাঘরের দিকে ছোটেন। রান্নাঘরের তাকে রাখা অনেক লোভনীয় খাবার গোগ্রাসে খান, যা আসলে অস্বাস্থ্যকর। এর কারণ হচ্ছে, এসব খাবার রান্নাঘরে চোখ বরাবর রাখা হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস এড়াতে তাই রান্নাঘর গোছগাছ রাখা জরুরি। বিশেষ করে বিস্কুট, চিপস বা অন্যান্য খাবার একটু চোখের আড়ালে বা ওপরের দিকের তাকে রাখা উচিত। এর বদলে বাদাম, শুকনো ফল বা স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নাঘরে এমনভাবে রাখতে হবে, যা সহজেই চোখে পড়ে।

৩. স্ক্র্যাবার পরিষ্কার না করা
অনেকেই স্ক্র্যাবার দিয়ে বাসন মাজেন। কিন্তু তা পরিষ্কার করে রাখেন না। স্ক্র্যাবার ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে তা ব্যাকটেরিয়া জন্মে। পরে বাসনকোসনে ওই ব্যাকটেরিয়া চলে আসে। স্ক্র্যাবার ঠিকমতো ধুয়ে রাখার অভ্যাস করুন। একই স্ক্র্যাবার দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভ্যাসও ছাড়ুন।

৪. পুরোনো ননস্টিক কড়াই
অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো কড়াই ব্যবহার করেন। যাঁরা একই কড়াই তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে ব্যবহার করছেন, তাঁরা একে বিদায় দিতে পারেন। ননস্টিক কড়াই তেলমুক্ত রান্নার জন্য ভালো। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারে এ ধরনের কড়াই থেকে ক্ষতিকর পদার্থ খাবারে মিশতে পারে। তাতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী টেফলন থাকতে পারে। তাই বেশি পুরোনো কড়াই ব্যবহার ছাড়তে হবে।

৫. ঠিকমতো ঢাকনা না দেওয়া
অনেকেই কোনো বয়ামের ঢাকনা খুলে তা ঠিকমতো আটকান না। এর ফলে বয়ামে বা পাত্রে রাখা খাবারে পিঁপড়া বা অন্য পোকামাকড় ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া সামান্য ধাক্কা লাগলেই তা পড়ে গিয়ে রান্নাঘরে ছিটিয়ে পড়ে। তাই বয়াম না আটকানোর বাজে অভ্যাস ছাড়ুন।

৬. একই চপিং বোর্ড বারবার
একই চপিং বোর্ড বারবার ব্যবহার করা ঠিক নয়। একই চপিং বোর্ডে মাংস ও সবজি না কাটার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। একই বোর্ডে এসব জিনিস কাটা স্বাস্থ্যকর নয় বলে পৃথক বোর্ড ব্যবহার করতে হবে।

৭. বেশি আঁচে রান্না
অধৈর্য হয়ে অনেকেই বেশি আঁচে রান্না করতে শুরু করেন। আগুনের আঁচ বাড়ানোর ফলে দ্রুত রান্না হয় ঠিকই কিন্তু তাতে খাবারের গুণগত মান কমে যায়। অনেক গন্ধ ও নমনীয় উপাদান হারিয়ে যায়। যাঁরা মজার স্বাদের রান্না করতে চান, তাঁরা মাঝারি বা অল্প আঁচে রান্না করুন।

৮. কড়াই ভরা রান্না
অনেকেই রান্না করার সময় কড়াই ভর্তি করে রান্না করেন। এতে অনেক উপাদান ঠিকমতো সেদ্ধ হয় না বা তাতে উপাদান ঠিকমতো মেশে না। এতে জুতসই রান্না হয় না। রান্না করার সময় কড়াই কিছুটা খালি রাখলে ঠিকমতো রান্না হবে।

৯. পড়ে যাওয়া খাবার তোলা
অনেকেই রান্নাঘর ঠিকমতো পরিষ্কার করেন না। রান্নাঘরের মেঝেতে কিছু পড়ে গেলে তা দ্রুত তুলে তা খেয়ে ফেলেন বা রান্নার মধ্যে দেন। তাঁরা মনে করেন, পড়ে যাওয়ার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে তুলে ফেললে কিছু হয় না। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। রান্নাঘর কতটা পরিষ্কার তা জানা জরুরি।

১০. রান্নাঘরের স্ল্যাব ঠিকমতো পরিষ্কার করা
ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু এড়াতে রান্নাঘরের স্ল্যাব ঠিকমতো পরিষ্কার করুন। ঠিকমতো জীবাণুনাশক ব্যবহার করে রান্নাঘরের স্ল্যাব পরিষ্কার করুন। তথ্যসূত্র: টাইমস ফুড।